কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন এলাকা কক্সবাজার ঘিরে আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পরিকল্পনা অনুযায়ী কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্প উদ্বোধন করেন।

প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দীর্ঘতম সৈকতের শহর কক্সবাজারকে সিঙ্গাপুর, ব্যাংককের আদলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ কারণে এখানে সবচেয়ে বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে। চলছে এক্সক্লুসিভ জোনসহ ইকোট্যুরিজম ও রেললাইনের কাজ। এসবের পূর্ণতার অন্যতম অনুষঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। স্থলের পাশাপাশি সমুদ্রের জলের ওপর রানওয়েসহ অত্যাধুনিক বিমানবন্দরটি বাস্তবায়ন হলে দিবারাত্রি ফ্লাইটে কক্সবাজার হবে ব্যস্ততম সিটি।'

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'কক্সবাজারকে ঘিরে নানা স্বপ্ন দেখতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই স্বপ্নে রয়েছে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে তৈরি করার পরিকল্পনাও। তার প্রচেষ্টায় ঝাউবন স্থাপন হয়েছে। তার রেখে যাওয়া পরিকল্পনারই অংশ কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ। এরইমধ্যে গড়ে উঠেছে দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এটিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ চলছে। রেললাইনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে গেছে কক্সবাজার। এসব পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে শহরটি। যেমনটা জাতির পিতা চেয়েছেন।'

কক্সবাজারে নির্মিতব্য দেশের চতুর্থ এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সাগরের বুকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় হবে তিন হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এটি হবে সাগর উপকূলে অবস্থিত বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর অন্যতম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার বিমানবন্দরে বোয়িং-৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণের নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে একে ঘোষণা করা হয়। প্রথমে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুটে এবং প্রস্থ ১২০ ফুট থেকে ২০০ ফুট করা হয়। এখন এটিকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। মহেশখালী চ্যানেলের দিকে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই রানওয়ে।

রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের নভেম্বরে অনুমোদন হয়। চীনা দুই প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ কাজ পেয়েছে। সেইসঙ্গে রানওয়ের সক্ষমতা বাড়ানো, এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজ করছে বেবিচক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর, ৭৪৭-৪০০ ও এয়ারবাসের মতো উড়োজাহাজ সহজেই ওঠানামা করতে পারবে।

এতে বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহন ক্ষমতাও বাড়বে। বৃদ্ধি পাবে ফ্লাইট ওঠানামার সংখ্যা। ভবিষ্যতে কক্সবাজারসংলগ্ন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশের বড় বড় এয়ারলাইন্সের বিমানও অবতরণ করতে পারবে কক্সবাজারে। আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্য নিয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে এ প্রকল্প।

সরেজমিনে দেখা যায়, মহেশখালী ও সোনাদিয়া দ্বীপের পাশেই সমুদ্রে বালু ভরাটের কাজ চলছে। বিমানবন্দরের ভেতরে টার্মিনাল ভবনটির কাজও প্রায় শেষের দিকে। নির্মাণকাজে জড়িত একজন প্রকৌশলী জানান, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। তিন শতাধিক শ্রমিক তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজ দুই অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে আগের টার্মিনাল ভবনসহ কিছু মেরামতের কাজ হচ্ছে। এটি শেষ পর্যায়ে। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে রানওয়ে সম্প্রসারণ, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং ও ল্যান্ডিং সিস্টেম স্থাপন এবং নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ। রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে।

শনিবার দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, রানওয়ের সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে দেশের পর্যটন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এ বিমানবন্দরকে ঘিরে তৈরি হবে একটি এভিয়েশন হাব বা বিমান চলাচল কেন্দ্রস্থল।

প্রকৌশলনিউজ/সু