দেশের সর্ববৃহৎ মহিলা কারাগার উদ্বোধন হচ্ছে আজ
দেশের সর্ববৃহৎ অত্যাধুনিক মহিলা কারাগার উদ্বোধন হচ্ছে আজ। রাজধানীর অদুরে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ইতোমধ্যেই নতুন এ মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারটি নির্মাণ করেছে সরকার। মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারটিতে থাকছে হাই সিকিউরিটি এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।
গাজীপুরের কাশিমপুরে দেশের প্রথম মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের পর দেশে এটি দ্বিতীয় মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার। এতে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত উভয় প্রকারের বন্দী রাখা হবে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হওয়া নারী বন্দীর আধিক্য ও ঢাকাসহ সারাদেশের নারী বন্দিদের সুবিধার্থে এই বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগারটির নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চূয়ালী এই কারাগারটির শুভ উদ্বোধন করবেন বলে গনমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন। সরকারের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সাথে এ কারাগারটিও শুভ উদ্বোধন করা হবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এ কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর নির্মাণ কাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হলেও করোনা ভাইরাসের কারণে এতাদিন এটি চালু করা সম্ভব হয়নি।
কারাসুত্র জানায়,সাধারণত কারাগার উদ্বোধনের পরপরই বন্দীদের রাখার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে কারাগারে বন্দী আনার পর উদ্বোধন করা হয়। তবে এক্ষেত্রে এ কারাগারটি ব্যতিক্রম। আজ এ কারাগারটি উদ্বোধন করা হলেও আজ থেকেই এ কারাগারে কোন প্রকার বন্দী রাখা হবে না। করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে আপাতত বন্দীকে রাখা হবে না। কারাবন্দীদের স্বার্থে কারা কতৃপক্ষ দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ কারাগারে কোন বন্দী না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কারাসুত্র জানায়, প্রথমে আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনারদের জন্য এ কারাগারটি তৈরী করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সকল প্রকার বন্দী থাকার জন্য তৈরীর নির্দেশ দেয় সরকার। কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দুটি পুরুষ ও একটি মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের কথা থাকলেও এ থেকে সরে আসে সরকার। এর স্থলে কেরানীগঞ্জে একটি পুরুষ কেন্দ্রীয় কারাগার ও একটি মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং একটি আধুনিক কারা হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। মোট ১৯৪ একর জমির উপর গৃহিত কারা কমপ্লেক্স সীমানায় ৩০ একর জমিতে এই কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৫ সালে মূল প্রকল্পটি শুরু হলেও ২০২০ সালের মার্চে এর পুরো কাজ শেষ হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট প্রকল্প ব্যয় হয় ৪৬৪ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে কারা কতৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন প্রকল্প পরিচালক জুহুরুল আলম চৌধুরি।
ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরকালে উক্ত কারাগারের আটক সকল নারী বন্দীদের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কেরানীগঞ্জ কারাগারটি শুধুমাত্র পুরুষ বন্দীদের রাখার জন্য তৈরী ছিল, সে জন্য নারী বন্দীদের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।বর্তমানে কাশিপুর মহিলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণের বেশী বন্দী বসবাস করছে।
জানা গেছে,মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারটি হচ্ছে দেশের আধুনিক সুবিধা সম্বলিত মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার। কারাগারটিতে মোট ৩০০ বন্দীর ধারণক্ষমতা রয়েছে। প্রথমবারের মতো পৃথক পৃথক সেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে বন্দীর শ্রেনীবিন্যাস করে রাখা যায়, সেজন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন কারাগারটিতে ১০ জন ডিভিশনপ্রাপ্ত (প্রথম শ্রেণীর বন্দী) রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া মানসিকভাবে অসুস্থ বন্দীদের জন্য মেন্টাল সেল নির্মাণ করা হয়েছে। কিশোর অপরাধ করে কারাগারে যাওয়া কিশোরীদেরকে অন্য নানা অপরাধে আটক হওয়া বন্দী থেকে পৃথক করে রাখার জন্য কিশোরী ওয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে।
জঙ্গী,শীর্ষ সন্ত্রাসী, আলোচিত মামলার আসামী ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ন সকল নারী বন্দীকে আটক রাখার জন্য দেশে এই প্রথমবারের মতো কারাগারের ভেতরেই পৃথকভাবে হাই সিকিউরিটি সেল নির্মাণ করা হয়েছে। উক্ত সেলে মোট ৩০ জন দুর্ধর্ষ নারী বন্দীকে রাখা হবে। এর বাইরে কারাবন্দীদের চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল ওয়ার্ড বা ৩ তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। এর বাইরে লাইব্রেরী নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে বন্দীদের পড়াশোনার জন্য বই থাকবে। এছাড়া ফাঁসির সেল ও সাধারণ বন্দীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। কারাসুত্র জানায়, নতুন এ কারাগারটিতে নারী কর্মকর্তা কর্মচারী কতৃক পরিচালিত হবে। যেখানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কর্মকর্তা কর্মচারী নারী থাকবেন। নারী বন্দীদের সুবিধার্থেই এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক উপসচিব জহুরুল ইসলাম চৌধুরি বলেন, ক্রমান্বয়ে নারী বন্দী বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী সুবিধাসহ দেশের বৃহত্তম মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারটি নির্মাণ করেছে সরকার।
খবর সুত্রঃ হালিম মোহাম্মদ।