খালেদার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি বিএনপির
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসায় সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তার দল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া দারুণভাবে অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু এ চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। এমনকি যে হাসপাতালে তিনি ছিলেন, সেখানেও সম্ভব হয় না। প্রয়োজনে সুচিকিৎসার জন্য তার বাইরে যাওয়া হয়ত দরকার হবে। এই ব্যাপারে সরকারের একটা নিষেধাজ্ঞা আছে।
আমরা দাবি জানাব, এই ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা সেটা প্রত্যাহার করা হোক এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক, যেন তিনি তার চিকিৎসার প্রয়োজনে যখন যেখানে যেতে চান, যেতে পারেন।’
সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তিনি এই দাবি জানান।
এই নিষেধাজ্ঞাটা অমানবিক ও অযৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদিও এই নিষেধাজ্ঞাটা অমানবিক ও অযৌক্তিক। কারণ এদেশের ইতিহাস বলে, অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের বাইরে যাওয়ার বহু দৃষ্টান্ত আছে। এমনকি জেলে থাকা অবস্থাও বাইরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি, এই অযৌক্তিক ও অমানবিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা দরকার। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, বার বার বিরোধী দলীয় নেত্রী, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে, কখন কোথায় চিকিৎসার জন্য যেতে হবে এবং যেটাই প্রয়োজন হবে সেটা যাতে বিঘ্নিত না হয় সরকারের উচিত সেটা নিশ্চিত করা।’
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতাদেশের দ্বিতীয় দফা মেয়াদেও শেষ প্রান্তে, এমন পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির চাওয়া কী?— জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। বারবার বলেছি, আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে অন্যায়ভাবে, বিনা অপরাধে। বেগম খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি দণ্ডপ্রাপ্তদেরকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কেন দেওয়া হয়েছে সেটা আপনারাও জানেন। কারণ, এটা খালেদা জিয়ার জন্য প্রযোজ্য না। তিনি সরকারের আপনজন না, প্রতিপক্ষ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার সকলের সরকার হওয়া উচিত। যেটা প্রমাণ করার জন্য হলেও অবিলম্বে তাকে নিশঃর্ত মুক্তি দেওয়া এবং তিনি যাতে স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারেন, সুচিকিৎসা নিতে পারেন এবং নাগরিক হিসেবে তার যে অধিকার সেই অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।’
খালেদা জিয়া বর্তমানে কেমন আছেন?— জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই ব্যাপারে তার চিকিৎসক টিম এবং আত্বীয়স্বজনদের বক্তব্য আপনারা বিভিন্ন সময়ে জানছেন এবং প্রকাশও করছেন। এর বাইরে তো বলার কিছু নাই। কারণ, আমরা তো তার সঙ্গে দেখাই করতে পারি না। আমরা যতটুকু জানি তিনি দারুণভাবে অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন।’
গত ২০ ফেব্রুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। ভার্চুয়াল এই বৈঠকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ খন্দকার মোশারররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুক্ত ছিলেন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্প্রতি নড়াইলের আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি, বরিশালে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সমাবেশে যোগদানে নেতা-কর্মীদের বাধা প্রদান এবং সিলটের সিটি মেয়র আরিকুল হক চৌধুরীসহ তার সহকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
একইসঙ্গে বগুড়ায় ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি দলীয় সাংসদ ও জেলার আহবায়ক জিএম সিরাজসহ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা এবং নোয়াখালীর বসিরহাটে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত সাংবাদিক মোজাক্কির বোরহান উদ্দিন মারা যাওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।
এটর্নি জেনারেল পদকে নিরপেক্ষ করার দাবিতে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনকে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটিতে নিয়োগ করায় বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয় যে, একটি সাংবিধানিক পদের অধিকারীকে দলীয় পদে নিযুক্ত করা দেশের ইতিহাসে একটি নতুন ঘটনা এবং নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কার্যালয়কে নগ্ন দলীয়করণের অপচেষ্টা। এটি একটি অত্যন্ত মন্দ দৃষ্টান্ত।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার পদের নিরপেক্ষতা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটর্নি জেনারেলের উচিত দলীয় পদ কিংবা এটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করা। যারা তাকে নিযোগ দিয়েছে তাদেরও উচিত অনৈতিক এই বিষয়টির গুরুত্ব ও জনমনে এর অনিবার্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে দলের উপকমিটি থেকে অবিলম্বে এটর্নি জেনারেলকে বাদ দেওয়া।’