পিডাব্লিউডি’র কাজে গতি বাড়ানোর প্রত্যয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের
কাজের গতি কম থাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) তে তাদের অবস্থান তলানিতে নেমে গেছে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, বড় বড় ঠিকাদারদের বেশি কাজ দিয়ে সেটা সম্পূর্ণ না করা, প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের অনিয়ম, জিকে শামীম কাণ্ড, জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব এবং নকশা প্রণয়নে সম্বন্বয়হীনতা। তবে, আগামীতে এসব বিষয়ে সর্তক থেকে সঠিকভাবে কাজ করে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার প্রত্যয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের।
গত দুই বছরে এপিএ পিছিয়ে ছিলো গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত বছর অর্জিত নম্বরের তালিকায় এ মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত নম্বর ৬৫ দশমিক ৫৫। এর আগের বছরও সবার শেষে অবস্থান ছিল এ মন্ত্রণালয়ের। সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের এমন কাজে সন্তষ্ট নন সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান।
তিনি মনে করেন, এটা একদিকে যেমন সরকারের কাছে সন্তোষজনক নয় তেমনি সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের কাছেও সন্তোষজনক নয়। গণপূর্ত বিভাগ সরকারের অনেক অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও বিবিধ কাজ করে থাকে। যেমন, হাসপাতাল, পুলিশ ব্যারাক, জেলা প্রশাসন অফিসসহ দেশের নাগরিকদের অনেক সেবামুলক কাজ করে থাকে।
শহীদ খান আরো বলেন, এসব অবকাঠামো নির্মাণ যদি ঠিক সময়ে না হয় তবে দুইটা জিনিস ঘটে । প্রথমত, বাজেটে দাম বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, ঠিক সময়মতো করতে না পারলে নাগরিকদের করের টাকায় যে কাজ হয় সেটার অপচয় হয়। আর তাতে নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হন, সরকারের অর্থের অপচয় হয়।
গণপূর্ত বিভাগ পিছিয়ে থাকলে সেটা তাদের জন্য লজ্জাকর এবং দেশের জন্য ক্ষতিকর বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণপূর্ত বিভাগকে এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কিভাবে বেরিয়ে আসবে সেটা তারাই বলতে পারেন।
বিগত বছরে ক্যাসিনোকাণ্ডের পরে গণপূর্ত বড় বড় ঠিকাদারদের দূর্নীতির বিষয়টি সামনে চলে আসে। তবে, এসব কাজে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অনেকে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল যার কারণে অনেক বড় বড় কাজ বন্ধ করতে হয়েছিলো।
আবু আলম শহীদ খান বলেন, এটার জন্য তো আর তারা জনগণকে দায়ি করতে পারেনা। এটা তো তাদের দোষেই হয়েছে। তারা কেন এ ধরণের ঠিকাদারদের কাজ দিয়েছিলো।
কেন বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) তলানিতে মন্ত্রণালয়! কারণ মন্ত্রণালয়ের সিংহভাগ কাজের দায়িত্বে থাকে গণপূর্ত আধিদপ্তর। এমন প্রশ্নের জবাবে গণপূর্ত আধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামিম আখতার প্রকৌশল নিউজকে বলেন, কাজ পিছানোর পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। আমাদের জমি পেতে অনেক সময় লেগে যায়। এছাড়া, কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যা হয়। আমরা অনেক কাজ শুরু করছি সেগুলো এখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেমন মেট্রো রেলের জন্য আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য কয়েকটি কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
প্রকল্পের ডিজাইন ও নকশা করতে সমস্যার কথা হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অনেক সময় নকশা নিয়ে সমস্যা হয়, যেভাবে কাজ শুরু হয় ক্লায়েন্ট সেটার নকশা পরিবর্তন করতে চায়। ঠিকাদারদের সমস্যা হল, কোন ঠিকাদার কাজ পেলে সেটা তার নামেই চেক হয়, সেটা উনি ছাড়া কেউ ভাঙ্গাতে পারেনা। সেক্ষেত্রে কাজ না করলে আবার রি-টেন্ডারে যেতে হয়। রি-টেন্ডার মানে অনেক সময়ক্ষেপন। সেখানে মেজিস্ট্রেড নিয়োগ করে কাজের হিসেব বের করতে হয়। যেমন, জিকে শামীমের ক্ষেত্রে যা হয়েছে।
এদিকে গণপূর্ত কাজের স্বচ্ছতার দিকে আঙ্গুল তোলেন সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। তিনি প্রশ্ন তোলেন কেন বালিশ কাণ্ড হয়, এসব জবাব তাদের দিতে হবে। তিনি বলেন, আমি যদি ধরে নেই এসব কান্ডের জন্য কাজে বাধাগ্রস্থ হয়েছে তবে সেটার জন্য দায়ী তারা। তারা দায় এড়াতে পারেননা। এই দায় তাদের নিতে হবে, এই দায় থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে শামিম আখতার বলেন, এটা শুধু পিডাব্লিওডি নয়, আমাদের ডিপার্টমেন্টের সাথে আরো অনেকেই যুক্ত। সেখানে আমরা থাকি, স্থপত্য অধিদপ্তর থাকে, যারা ফান্ডিং করে তারাও থাকে। এগুলোর ভিতরে না ঢুকলে বোঝা যাবেনা। আর আমাদের নিজস্ব সিস্টেমের যে সমস্যা নেই তা নয়, আমাদের কারণে যেগুলো সমস্যা হয় সেগুলো উন্নতি করার চেষ্টা করছি বলেও জানান তিনি।
তবে, সবার প্রত্যাশা আগামীতে সরকারের এই উন্নয়ন সংস্থাটির কাজের গতি আরও বেগবান হবে এবং এপিএ তলানি থেকে উঠে আসবে।
এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) অর্জিত নম্বর প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় কমিটি এই নম্বর চূড়ান্ত করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদনের চুক্তির নম্বরের গড় ছিল ৮৪ দশমিক ০৪।
আগামী এক বছর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কাজ করবে, সেটার একটি অঙ্গীকারনামাই হচ্ছে এপিএ বা বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে সিনিয়র সচিব ও সচিবরা স্বাক্ষর করেন। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো অধীনস্থ দফতর/সংস্থাগুলোর সঙ্গে এপিএ চুক্তি করে থাকে।
চুক্তি অনুযায়ী বাস্তবায়ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় কমিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নম্বর দিয়ে থাকে।
প্রকৌশল নিউজ/আই/এস