ব্যাঙ্গালুরুর পাড্ডিকাল ঝড়ে উড়ে গেলো রাজস্থান
সাম্প্রতিক সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। তিনি যেদিন আপন ছন্দে থাকেন, সেদিন প্রতিপক্ষের ১১ জনসহ ননস্ট্রাইকের ব্যাটসম্যানও হয়ে পড়েন নীরব দর্শক। আর সেই কোহলিকে যখন কোনো ব্যাটসম্যান দর্শক বানিয়ে ফেলেন, তখন বুঝতে নিশ্চয়ই হয়েছে বড় কোনো কীর্তি।
ঠিক তাই! রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে স্রেফ দর্শক বানিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান, সানজু স্যামসনদের রাজস্থান রয়্যালসকে নিয়ে ছেলেখেলা করলেন তরুণ বাঁহাতি ওপেনার দেবদূত পাড্ডিকাল। তার আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে রাজস্থানকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে চতুর্থ জয় তুলে নিয়েছে ব্যাঙ্গালুরু।
অবশ্য পুরোপুরি নীরব দর্শক ছিলেন না কোহলিও। তিনিও ঝড় তুলেছেন যখনই সুযোগ পেয়েছেন। আর এর সুবাদেই রাজস্থানের করা ১৭৭ রানের লক্ষ্য টপকাতে মাত্র ১৬.৩ ওভার লেগেছে ব্যাঙ্গালুরুর। দেবদূত ১০১ ও কোহলি ৭২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন।
এ জয়ের ফলে চার ম্যাচে পূর্ণ ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেছে ব্যাঙ্গালুরু। সব দল চার ম্যাচ করে খেলে ফেলার পর একমাত্র অপরাজিত দল ব্যাঙ্গালুরুই। অন্যদিকে চার ম্যাচে মাত্র এক জয়ে টেবিলের সবার নিচে মোস্তাফিজের রাজস্থান।
১৭৯ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলেছেন দেবদূত। বিশেষ করে ক্রিস মরিসের প্রথম ওভারেই ১৫ কিংবা মোস্তাফিজের ব্যক্তিগত প্রথম ওভারে ১০ রান নিয়ে নিজের কর্তৃত্বের জানান দিয়েছেন ২০ বছর বয়সী এ ওপেনার।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে মাত্র ২৭ বলে আইপিএলে নিজের ষষ্ঠ ফিফটি করেন দেবদূত। তখন কোহলির সংগ্রহ ১৭ বলে ১৯ রান। অর্থাৎ পুরো ঝড় একাই তোলেন দেবদূত। ফিফটি পেরিয়ে আরও আক্রমণাত্মক হন তিনি। যার ফলে মাত্র ১০ ওভারেই ১০৭ রান করে ফেলে ব্যাঙ্গালুরু।
তখন দেবদূতের সংগ্রহ মাত্র ৩৬ বলে ৮০ রান। অন্যদিকে কোহলি খেলছিলেন ২৪ বলে ২৬ রান নিয়ে। এরপর যেন নিজের ক্যালমা দেখানো শুরু করেন ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়ক। প্রথম ২৪ বলে ২৬ নেয়া কোহলি, পরের ১০ বলেই নেন ২৪ রান, ৩৪ বলে পৌঁছে যান চলতি মৌসুমের প্রথম ফিফটিতে।
পঞ্চাশ পূরণ করার ওভারেই ক্রিস মরিসকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আইপিএলের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার রানের মাইলফলকে প্রবেশ করেন কোহলি। তখন তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের কারণে মনে হচ্ছিল হয়তো সেঞ্চুরি আর করা হবে না দেবদূতের। তবে অনুজকে সেই সুযোগ ঠিকই দিয়েছেন অধিনায়ক কোহলি।
১৬ ওভার শেষে ১৭০ রান করে ফেলে ব্যাঙ্গালুরু। তখন ৯৭ রানে অপরাজিত ছিলেন দেবদূত। মোস্তাফিজ করতে আসেন ১৭তম ওভার। তার প্রথম বলেই চার মেরে আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন দেবদূত। মাত্র ৫১ বলে ১১ চার ও ৬ ছয়ের মারে এ সেঞ্চুরি করেন তিনি।
দেবদূতের এমন অসাধারণ সেঞ্চুরি ও কোহলির ঝড়ের ম্যাচটি শেষ হয়েছে মোস্তাফিজের এক বেরসিক ডেলিভারির মাধ্যমে। ব্যাঙ্গালুরুর জয়ের জন্য যখন ২ রান প্রয়োজন, তখন লেগসাইডে বিশাল ওয়াইড করেন মোস্তাফিজ, সেটিই হয়ে যায় বাউন্ডারি। ফলে ১০ উইকেটের জয় পায় ব্যাঙ্গালুরু।
শেষ পর্যন্ত ৫২ বলে ১১ চার ও ৬ ছয়ে ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন দেবদূত। সন্দেহাতীতভাবে তার হাতেই ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার। অন্যদিকে ৬ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৪৭ বলে ৭২ রান করে দেবদূতকে সঙ্গ দেয়ার পাশাপাশি দলকে জিতিয়েই বের হন ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়ক।
রাজস্থানের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে আইপিএলের রেকর্ডমূল্য সোয়া ১৬ কোটি রুপির ক্রিস মরিস। তার ৩ ওভারে ৩৮ রান নিয়েছে ব্যাঙ্গালুরু। মোস্তাফিজ ৩.৩ ওভারে দিয়েছেন ৩৪ রান। এছাড়া ৩ ওভারে ৩৫ রান খরচ করেছেন শ্রেয়াস গোপাল।
এর আগে মুম্বাইর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ব্যাঙ্গালুরুর আমন্ত্রণে ব্যাট করতে নামার পর শুরুতেই দারুণ বিপর্যয়ে পড়ে রাজস্থান। জস বাটলার ৮ রানে, মনন ভোরা ৭ রানে এবং ডেভিড মিলার আউট হয়ে যান শূন্য রানে।
অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসন করেন ২১ রান। শিবাম দুবে ৪৬, রায়ান পারাগ ১৬ বলে ২৫, রাহুল তেওয়াতিয়া ২৩ বলে ৪০ রান করলে একটা চ্যালেঞ্জিং স্কোরে গিয়ে দাঁড়ায় রাজস্থানের স্কোর। ক্রিস মরিস ১০ রান করেন। স্রেয়াশ গোপাল অপরাজিত থাকেন ৭ রানে। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান সংগ্রহ করে রাজস্থান।
রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে মোহাম্মদ সিরাজ, হার্শাল প্যাটেল নেন ৩টি করে উইকেট। কাইল জেমিসন, কেনে রিচার্ডসন এবং ওয়াশিংটন সুন্দর ১টি করে উইকেট নেন।
প্রকৌশল নিউজ/এমএস