লঙ্কানদের কাছে মুমিনুলদের অসহায় আত্মসমার্পণ
পাল্লেকেলেতে লঙ্কানদের কাছে ২০৯ রানের বিশাল হার দিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হাতছাড়া করলো বাংলাদেশ। অথচ দীর্ঘদিন পর দেশের বাইরে একটা টেস্ট সিরিজ জেতার সম্ভাবনা ছিল টাইগারদের সামনে।
প্রথম ম্যাচে বিশাল রানের পাহাড় গড়ে তৃতীয় দিনে লঙ্কানদের ব্যাটিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে বোলারদের দূর্বল বোলিংয়ে উইকেটের সুবিধা তুলতে না পারায় সে ম্যাচ ড্র করে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ম্যাচে আশা ছিল ভালো কিছু করার। কিন্তু প্রথম ম্যাচের ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গেলো দ্বিতীয় টেস্টে। এখানে বোলাররা কিছুটা সফল হলেও ব্যাটিং ব্যর্থতা আবারো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল টেস্ট খেলায় বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের ধৈর্য্য কতটা কম।
আর এভাবে হারের পর পোস্ট ম্যাচ সংবাদ সম্মেলনে টাইগার টেস্ট ক্যাপ্টেন বললেন, টসে হেরে গিয়েই নাকি ম্যাচের অর্ধেকটা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। বাকিটা অবশ্য খেলোয়াড়দের ঘাড়েই চাঁপিয়েছেন তিনি।
আজ হারের পর তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদমাধ্যমকে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হকের বলা দুটি কথা নজর কেড়েছে ক্রিকেট ভক্তদের। তিনি বলেছেন, ‘আমার মতে এই টেস্টে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল টস, অন্তত আমার চোখে।...টসেই টেস্টের ভাগ্য প্রায় ৫০ শতাংশ ঠিক হয়ে যায়।’
মুমিনুলের কথা অনুযায়ী, বাংলাদেশ টস হারের পরই ম্যাচের ভাগ্য অর্ধেক ঠিক হয়ে গিয়েছিল। বাকি অর্ধেক ঠিক হয়েছে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে—এই ‘যৌথ প্রযোজনা’তেই দলের বড় হার।
মুমিনুলের এই ‘আবিষ্কার’ সত্যিই ভ্রু কুঁচকে দিয়েছে টাইগার ভক্তদের।
কেননা, খেলা শুরুর আগেই টস যদি ম্যাচের ভাগ্য ‘অর্ধেক’ গড়ে দেয় তাহলে এই বিভাগ নিয়ে প্রতিটি দলের না হলেও অন্তত বাংলাদেশ দলের আলাদা করে অনুশীলনের প্রস্তুতি থাকা উচিত। প্রতিটি টুর্নামেন্টের আগে খেলোয়াড়েরা যেমন প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন, তেমনি অধিনায়কেরও মুদ্রানিক্ষেপে আলাদা করে ঘাম ঝরানো এখন সময়ের দাবি। তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
টেস্ট ক্রিকেটে ১৪৪ বছরের ইতিহাসে শোনা গেছে, খেলোয়াড়দের দক্ষতার ভিত্তিতেই ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়। উইকেট তো ‘পরীক্ষাকেন্দ্র’—সেখানে আগে কিংবা পরে যখন, যে পরিস্থিতিতেই ব্যাটিং-বোলিং করা হোক না কেন, তা উতরে যেতেই তো অনুশীলনের পর অনুশীলন।
প্রথম দুই দিন ব্যাটসম্যানদের থাকবে তা জানা কথা, শেষ তিন দিন স্পিনারদের সেটাও জানা কথাই। আবার জানা এবং চিরচেনা দৃশ্যও দেখা গেল মাঠে, উইকেটে স্পিন ধরা মাত্রই হাঁটু কাঁপাকাঁপির শুরু। ইতিবাচক ক্রিকেট খেলার অজুহাতে—আসলে রক্ষণাত্মক খেলার ধৈর্য হারিয়ে—তুলে মারা থেকে মুশফিকুর রহিমের অসহায় আত্মসমর্পণ পর্যন্ত মনে করে দেখুন, একটা প্রশ্ন মাথায় ঘাই মারবেই—দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এত এত স্পিনবান্ধব উইকেট তাহলে কিসের জন্য?
শ্রীলঙ্কা প্রথম দুই দিন ব্যাট করেছে। পরের তিন দিন মিলিয়ে বাংলাদেশ দুবার ব্যাটিংয়ে নেমেছে। প্রথম ইনিংসে ২৫১ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২২৭ রানে অলআউট।
মুমিনুল বলেছেন, ‘আমরা এই টেস্ট হেরেছি প্রথম ইনিংসেই, যখন ২৫০ (আসলে ২৫১) রানে অলআউট হয়ে যাই। আমাদের আরও ভালো ব্যাট করা উচিত ছিল।’ সে তো বটেই। টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্তির ২১ বছর পেরিয়ে ঘরে ব্যাটিং ও স্পিনবান্ধব উইকেটের বাগিচা বিছিয়ে বানানো ‘(বদ)অভ্যাস’ও কিন্তু মুমিনুলের এ কথায় ডুকরে কেঁদে উঠবে।
কেননা, বিদেশের মাটিতে স্পিনবান্ধব উইকেটে গিয়ে যদি খাবি-ই খেতে হয় তাহলে ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত স্পিনবান্ধব উইকেটের কি কারন থাকতে পারে?