সাকিবের নৈপুণ্যে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ
সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে জয়ের পাশাপাশি তিন ম্যাচের সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের জন্য ২৪১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে এক পর্যায়ে হারের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তবে সাকিবের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি ৩ উইকেটে জিতেছে টাইগাররা। এই জয়ে একই সঙ্গে সিরিজও নিশ্চিত করেছে তামিম ইকবালের দল।
প্রথম ম্যাচে ১৫৫ রানের বড় জয় পেয়েছে সফরকারীরা।
শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। হাতে ছিল ৩ উইকেট। টেন্ডাই চাতারার করা শেষ ওভারে সাকিব ও সাইফউদ্দিন মিলে ৯ রান নেন। ফলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩ রান। ইনিংসের শেষ ওভারে ওয়েসলি মুজুরাবানির প্রথম বলেই সাকিব বাউন্ডারি হাকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়ের দেওয়া লক্ষ্য তাড়া করতে ইনিংস ওপেন করতে নামেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুজনে। এরপর ধীরে ধীরে মনোযোগ দেন রানের গতি বাড়ানোর দিকে।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ব্রেন্ডন টেলরের হাতে জীবন পেয়েছিলেন তামিম। তবে জীবন পেয়েও বেশি রান করতে পারেননি তিনি। লুক জংওয়ের বলে সিকান্দার রাজার দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে ২০ রানে সাজঘরে ফেরেন টাইগার অধিনায়ক।
তামিমের বিদায়ের পর ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটনও। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা এ ব্যাটসম্যান গারাভার বল পুল করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। করেন ২১ রান।
এরপর মোহাম্মদ মিঠুন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত কেউই ভালো করতে পারেনি। দুজনেই ব্যাট হাতে ছিলেন ব্যর্থ। সাজঘরে ফেরার আগে মিঠুন ২ ও মোসাদ্দেক ৫ রান করেন।
৭৫ রানে চার উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন সাকিব ও রিয়াদ। দুজনের ব্যাটে ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এই জুটি ৫৫ রানের বেশি স্থায়ী হয়নি।
মুজারাবানির বলে কাট করতে গিয়ে ঠিকভাবে ব্যাটে বলে করতে পারেননি রিয়াদ। ফলে এজ হয়ে বল সোজা চলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে। এর আগে তিনি করেন ২৬ রান।
তার জায়গায় নেমে ৬ রান করেই জিম্বাবুয়েকে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন মেহেদী মিরাজ।
রিয়াদ ফেরার পরের ওভারে সিকান্দার রাজার বলে কভারে চার হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের ৪৫তম অর্ধশতক পূরণ করেন সাকিব। ৫৯ বল খেলে এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। তার সঙ্গে ইনিংস এগিয়ে নেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। কিন্তু ১৫ রানে থাকা অবস্থায় সিকান্দার রাজার সাধারণ মানের একটি বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি।
সাইফউদ্দিন যখন নামেন, তখন জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার আরো ৬৮ রান। হাতে ছিল ৩ উইকেট। সাকিবকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে ধীরে ধীরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত এই অলরাউন্ডার অপরাজিত থাকেন ২৮ রানে। ১০৯ বলে ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন সাকিব। চার ম্যাচ পর ব্যাটে রান পেলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ২ উইকেট নেন জংওয়ে। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন মুহারাবানি, গারাভা, মাধেভেরে ও রাজা।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর। দলের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন তাদিওয়ানাশে মারুমানি ও তিনাশে কামুনহুকামওয়ে। প্রথমজন নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামলেও পরের জনের এ ম্যাচেই অভিষেক হয়।
নিজের প্রথম ডেলিভারি ওয়াইড দিলেও দ্রুতই নিজের চেনা লাইন-লেন্থে ফিরে আসেন তাসকিন আহমেদ। ফলও পেয়ে যান দ্রুত। নিজের প্রথম ওভারের শেষ বলে আফিফ হোসেনের ক্যাচে পরিণত করে কামুনহুকামওয়েকে সাজঘরে ফেরান তিনি। অভিষিক্ত এই ব্যাটসম্যান করেন ১ রান।
এরপর ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া রেগিস চাকাভাকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে যান মারুমানি। তাসকিনের করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারে পরপর দুই বলে জীবন পান মারুমানি। রিয়াদের সুযোগটি কঠিন থাকলেও বেশ সহজ ক্যাচ তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন সাইফউদ্দিন।
অবশ্য জীবন পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি।
পরের ওভারে এসেই মেহেদী হাসান মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে যান মারুমানি। এর আগে ১৮ বল খেলে করেন ১৩ রান। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর চাকাভা ও ব্রেন্ডন টেলরের ব্যাটে বেশ ভালোভাবে ম্যাচে ফেরে জিম্বাবুয়ে। পাল্টা আক্রমণে ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিচ্ছিলেন তারা। তবে তাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেন সাকিব।
ইনিংসের ১৬তম ওভারে সাকিবের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হন চাকাভা। ৩২ বলে ২৬ রান করেন তিনি। এরপর আগের ম্যাচের মতো এবারও দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন টেলর। কিন্তু হাস্যকর ভুলে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন তিনি।
ইনিংসের ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্সার দিয়েছিলেন শরিফুল। কিছুটা নিচু হয়ে পুল আপার কাট শট খেলার চেষ্টা করেছিলেন টেলর। তবে ব্যাটে বলে হয়নি। এরপর শ্যাডো অনুশীলন করতে গিয়েই বিপত্তি বাঁধান তিনি।
বল উইকেটকিপারের গ্লাভসে জমা হওয়ার পর টেলর স্বভাবমূলকভাবে ব্যাট হাতে শ্যাডো করছিলেন। এ সময় তার ব্যাট স্টাম্পে আঘাত করলে বেল পড়ে যায়। পরে আম্পায়াররা চেক করে টেলরকে আউট ঘোষণা করেন।
সাজঘরে ফেরার আগে ৫৭ বলে ৪৬ রান করেন টেলর। স্ক্রিণে যখন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ককে আউট ঘোষণা করা হয়, তখনও যেন টাইগাররা বিশ্বাসই করতে পারেননি। বোলার শরিফুলও মুখ চেপে হাসতে থাকেন।
সাজঘরে ফেরার আগে ওয়েসলে মাধেভেরেকে সঙ্গে নিয়ে ৩৫ রানের জুটি গড়েন ডিওন মায়ার্স। সাকিবের বলে সাজঘরে ফেরার আগে ৩৪ রান করেন তিনি। খেলেন ৫৯ বল।
এক প্রান্ত আগলে রেখে দলের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিফটি তুলে নেন ওয়েসলে মাধেভেরে। শরিফুল ইসলামের বলে তামিম ইকবালের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এর আগে করেন ৫৬ রান।
তার বিদায়ের পর জিম্বাবুয়ের আর কেউই ক্রিজে টিকতে পারেননি। শেষ দিকে আসা যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন তারা। সিকান্দার রাজা ফেরেন ৩০ রানে। আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি।
চার উইকেট নিয়েটাইগার দলের সেরা বোলার শরিফুল ইসলাম। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া সাকিব আল হাসান নেন দুই উইকেট। এছাড়া তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মেহেদী হাসান মিরাজ একটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ২৪০/৯ (কামুনহুকামউই ১, মারুমানি ১৩, চাকাভা ২৬, টেইলর ৪৬, মায়ার্স ৩৪, মাধেভেরে ৫৬, রাজা ৩০, জঙ্গুয়ে ৮, মুজারাবানি ০, চাতারা ৪*, এনগারভা ৭*; তাসকিন ১০-০-৩৮-১, সাইফ ১০-০-৫৪-১, মিরাজ ৭.২-০-৩৪-১, শরিফুল ১০-০-৪৬-৪, সাকিব ১০-০-৪২-২, মোসাদ্দেক ১.৪-০-৭-০, আফিফ ১-০-১১-০)
বাংলাদেশ: ৪৯.১ ওভারে ২৪২/৭ (তামিম ২০, লিটন ২১, সাকিব ৯৬*, মিঠুন ২, মোসাদ্দেক ৫, মাহমুদউল্লাহ ২৬, মিরাজ ৬, আফিফ ১৫, সাইফ ২৮*; মুজারাবানি ৯.১-১-৩১-১, চাতারা ৭-১-৫২-০, জঙ্গুয়ে ৮-০-৪৬-২, এনগারাভা ৯-১-৩৩-১, মাধেভেরে ১০-০-৩৯-১, রাজা ৬-০-৩৩-১)
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস