বাপ-দাদার কারবার ছিল বেদে, তাদের কারবার ইয়াবা
ভাসমান বেদে দলের ছদ্মবেশ ধারণ করে নদী পথে ঢাকায় এসে ইয়াবা পাচার করত একটি চক্র। চক্রটি কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে তারা মহাসড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ইজিবাইক, সিএনজি ও টেম্পু ব্যবহার করে পথ পাড়ি দিত। দ্বিতীয় ধাপে তারা সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়ে মুন্সিগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করত। মানুষের সন্দেহ দূর করতে পথের মাঝে বিভিন্ন মনিহারী দ্রব্য যেমন-চুড়ি, কড়ি, চুল বাধার ফিতা, শিশুদের কোমড়ে বাধার ঘন্টা, চেইন, সেইফটি পিন, বাতের ব্যথার রাবার রিং ইত্যাদি বিক্রি করত।
এসময়ে তাদের সঙ্গে থাকা রান্না করার টিনের চুলার ভেতরে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে আনা ইয়াবার কথা স্বীকার করে এবং রান্না করার চুলার নিচের অংশ কেটে তার ভেতর থেকে মোট ৭৭ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে। এ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতার এ চক্রের সদস্যরা হলেন- মো. তারিকুল ইসলাম (২৩), মো. সিনবাদ (২৩), মো. মিম মিয়া (২২), মো. ইমন (১৯), ও মো. মনির (২৮)।
এসময় তাদের নিকট থেকে ছদ্মবেশ ধারণের সরঞ্জামাদি, রান্নার হাড়ি-পাতিল, বালতি, বহনযোগ্য ডিসপ্লে র্যাক এবং নানান ধরণের ইমিটেশন অলংকার উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (০৫ মে) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার।
তিনি বলেন, গ্রেফতারদের পূর্ব পুরুষেরা বেদে সম্প্রদায়ের লোক ছিল। বর্তমানে বেদে সম্প্রদায়ের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় গ্রেফতারকৃতরা কক্সবাজার সীমান্ত থেকে ইয়াবা এনে ঢাকায় সরবরাহ করত।
লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, র্যাব-২ এর আভিযানিক দল র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, একদল মাদক কারবারী মাদকের একটি বড় চালান নিয়ে নদী পথে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে আসছে। এ প্রেক্ষিতে র্যাব-২ এর আভিযানিক দল গতকাল মঙ্গলবার রাতে মোহাম্মদপুরের বসিলা মধ্যপাড়া এলাকায় অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ভাসমান বেদে দলের ছদ্মবেশ ধারণ করে তারা মাদক পাচার করত। এসময়ে তারা সঙ্গে থাকা বহনযোগ্য রান্না করার টিনের চুলার ভেতরে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে আনা ইয়াবার কথা স্বীকার করে এবং রান্না করার চুলার নিচের অংশ কেটে তার ভেতর থেকে মোট ৭৭ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) বলেন, কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা ও সমুদ্র পথে বাংলাদেশে আসা ইয়াবা ট্যাবলেট রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল তারা। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে অভিনব কায়দা হিসেবে বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে মাদক বহন করে নিয়ে আসত। তারা মাদকের চালান কক্সবাজার এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কখনই মহাসড়ক ব্যবহার করত না।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে তারা মহাসড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ইজিবাইক, সিএনজি ও টেম্পু ব্যবহার করে পথ পাড়ি দিত। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম সিটি গেটসহ বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়াতে প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে হাটহাজারী-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড় হয়ে ফেনী আসতো।
সেখান থেকে তারা নোয়াখালীর-চৌমুহনী-সোনাইমুরী এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ হয়ে মতলব লঞ্চঘাট পর্যন্ত আসতো। দ্বিতীয় ধাপে তারা সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়ে মুন্সিগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকার প্রবেশ করত। এতে করে তাদের ৪ থেকে ৫ দিন অথবা কোনও কোনও সময় এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেত বলে জানায়।
এই দীর্ঘ সময় তারা বেদেদের মতই জীবন-যাপন করত ও সাধারণ মানুষের সন্দেহ দূর করতে পথের মাঝে বিভিন্ন মনিহারী দ্রব্য যেমন-চুড়ি, কড়ি, চুল বাধার ফিতা, শিশুদের কোমড়ে বাধার ঘন্টা, চেইন, সেইফটি পিন, বাতের ব্যথার রাবার রিং ইত্যাদি বিক্রি করত। মাদক পরিবহনের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই ধরনের কৌশলের মুখামুখি ইতোপূর্বে কখনও হয়নি এবং তারা যে রুটটি ব্যবহার করছে তাও একেবারে নতুন বলা চলে।
এসময় তাদের নিকট থেকে ছদ্মবেশ ধারণের সরঞ্জামাদি, রান্নার হাড়ি-পাতিল, বালতি, বহনযোগ্য ডিসপ্লে র্যাক এবং নানান ধরণের ইমিটেশন অলংকার উদ্ধার করা হয়।
প্রকৌশল নিউজ/আইএ