গায়ত্রীকে প্রথমদিন চুমু, দ্বিতীয়দিন শারীরিক সম্পর্কে জড়ান বাবুল আক্তার


প্রকৌশল নিউজ ডেস্ক:
গায়ত্রীকে প্রথমদিন চুমু, দ্বিতীয়দিন শারীরিক সম্পর্কে জড়ান বাবুল আক্তার
  • Font increase
  • Font Decrease

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে বাবুল আক্তারের সাথে ২০১৩ সালে পরিচয় হয় সেখানে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা গায়ত্রী অমর সিংয়ের। একসময় সেই গায়ত্রীর সাথে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন বাবুল আক্তার। একসময় সেই খবর পৌঁছে যায় স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর কানেও। শুরু হয় অশান্তির ঢেউ। এই প্রণয়ের জের ধরেই প্রাণ গেল বাবুলপত্নী মিতুর। ইতি ঘটে চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের ক্যারিয়ারেরও।

মিতু হত্যা মামলার তদন্তে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সাবেক এক নারী কর্মকর্তার সম্পর্কে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ইউএনএইচসিআর এর ঢাকার গুলশানের অফিস ও কক্সবাজারের সাব অফিসে মঙ্গলবার চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে ২০১৩ সালে কক্সবাজারে কর্মরত এক সাবেক বিদেশি কর্মকর্তার তথ্য চাওয়া হয়েছে।

চিঠির বিষয়ে পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে, আমরা ওই নারীর ব্যাপারে তিনটি তথ্য চেয়ে ইউএনএইচসিআর অফিসগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছি।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, চিঠিতে ইউএনএইচসিআর এর কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে; তার মধ্যে আছে ওই নারীর পুরো ঠিকানা, ফোন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্টের একটি ফটোকপি এবং তিনি কক্সবাজারে থাকাকালীন তার ঠিকানা এবং কক্সবাজারে থাকাকালীন তার চলাফেরার তথ্য।

গত ১২ মে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন তার মেয়ের স্বামী ও সাবেক এসপি বাবুলসহ সাতজনের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপরই বিদেশি এক নারীর কথা সামনে আসে।

গায়ত্রী অমর সিং একজন ভারতীয় নাগরিক। তিনি জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার—ইউএনএইচসিআর-এর ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন কক্সবাজারে। ব্যক্তিগত জীবনে গায়ত্রী বিবাহিত এবং তার একটি ছেলে রয়েছে। বর্তমানে সুইজারল্যান্ড বা পূর্ব আফ্রিকার কোনো দেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের প্রটেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত গায়ত্রী। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। মামলার বিষয়ে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।

বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে- গায়েত্রী অমর সিংহের সঙ্গে বাবুল আক্তারের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গায়ত্রী তখন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। আর বাবুল আক্তার তখন কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখনই তার সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পর্ক হয় বলে অভিযোগ করেছিলেন বাবুল আক্তারের শ্বশুর। গায়ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ানোর কারণেই বাবুল-মিতুর সুখের সংসারে কলহ বাধে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কক্সবাজার জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত থাকার সময় ২০১৩ সালে ইউএনসিসিআর এর কর্মী গায়ত্রী অমর শিংয়ের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এই নিয়ে মিতুর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় মিতুর। কলহের সময় মিতুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন বাবুল। এরই মধ্যে ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘ শান্তিমিশনে সুদানে ছিলেন বাবুল আক্তার। এই সময় বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনটি চট্টগ্রামের বাসায় ছিল। ওই মোবাইল ফোনে মোট ২৯ বার ম্যাসেজ দেন গায়ত্রী অমর শিং।

মিতুর মা সাহেদা মোশাররফও অভিযোগ করেন, গায়ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় মিতুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেন বাবুল। মিতুর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে একদিন রাত ৩টার সময় ফোন দিয়ে বলেছিল, মা, আমি কালই ঢাকায় চলে আসব। তখন আমি মিতুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কী হয়েছে? মিতু তখন বলেছিল, কক্সবাজারের একটি হোটেলে একজন নারীর সঙ্গে বাবুলকে দেখেছে মিতু। বহুবার আমার মেয়ে আমাকে বলেছিল। শুধু দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সে বাবুলের সঙ্গে সংসার করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়ে আর বাঁচতে পারল না। ওরা আমার নাতির সামনে আমার মেয়েকে খুন করে ফেলল।’

বাবুল-গায়ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানা যায় ২০১৪ সালে। সেসময় বাবুল সুদানে জাতিসংঘের মিশনে যান। তখন তার বাসায় দুটি বই উপহার পাঠান গায়ত্রী। এছাড়া বাংলাদেশে রেখে যাওয়া বাবুলের মোবাইলে ২৯টি মেসেজও পাঠান তিনি।

সর্বশেষ মিতু হত্যার কয়েকমাস আগে বাবুল একটি ট্রেনিংয়ে থাকা অবস্থায় গায়ত্রী বাবুলের বাসায় দুটি বই উপহার পাঠান। বই দুটির নাম- তালিবান ও বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট। তালিবান বইটির ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় গায়ত্রী নিজ হাতে একটি বার্তা লিখে দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমাদের ভালো স্মৃতিগুলো অটুট রাখতে তোমার জন্য এই উপহার। আশা করি, এই উপহার আমাদের বন্ধনকে চিরস্থায়ী করবে। ভালোবাসি তোমাকে, গায়ত্রী।’

একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় গায়ত্রী তাদের প্রথম দেখা, প্রথম একসঙ্গে কাজ করা, প্রথম কাছে আসা, মারমেইড হোটেলে ঘোরাফেরা, রামু মন্দিরে প্রার্থনা, রামুর রাবার বাগানে ঘোরাফেরা এবং চকরিয়ায় রাতে সমুদ্রের পাশ দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি স্মৃতির কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট নামের বইয়ের ২য় পাতায় গায়ত্রীর নিজ হাতে ‘তোমার ভালোবাসার গায়েত্রী (ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা)’ লিখেন।

বইয়ের নোট অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর গায়ত্রীর সাথে প্রথম দেখা হয় বাবুলের। একে অপরকে প্রথমবার চুমো খান ৫ অক্টোবর। এর দুদিন পর ৭ অক্টোবর দুজনের মধ্যে প্রথম শারীরিক সম্পর্ক হয়। দুজনে প্রথমবারের মত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হাঁটেন ৮ অক্টোবর। এসব তথ্যের সাথে ১০ অক্টোবর গায়ত্রীর জন্মদিনের তথ্যও ওই পাতায় নোট করে রাখেন বাবুল আক্তার।

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে। ঘটনার পর তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছিলেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ এই হত্যার জন্য বাবুলকে দায়ী করে আসছিলেন।

শুরু থেকে চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেয়। এই বছর ১১ মে চট্টগ্রাম পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুলকে তাদের কার্যালয়ে ডেকে পাঠায়। সেখানে তিনি গোয়েন্দাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। এরপরই তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়। মিতুর বাবা এর পরদিন বাবুলকে প্রধান আসামি করে আট জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস