এটিএম বুথের সার্ভার কারসাজি : গ্রেপ্তার ৪
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম এর ইলেকট্রিক জার্নাল পরিবর্তন করে ২ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হল- মিসেস সায়মা আক্তার, আল-আমিন বাবু, মেহেদী হাসান ওরফে মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুর ১২ টা থেকে ধারাবাহিক অভিযানে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। বুধবার দুপুর ১২ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম এর ইলেকট্রিক জার্নাল পরিবর্তন করে ২ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রের মূল হোতা মীর মোঃ শাহারুজ্জামান ওরফে রনি কৌশলে বিভিন্ন এটিএমের ইলেকট্রনিক জার্নাল পরিবর্তন করে ৬৩৭ টি এ্যকাউন্ট এর মাধ্যমে ১৩৬৩ টি লেনদেন করিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করেন।
প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসাদুজ্জামান আসাদ বিসমিল্লাহ বিডি এন্টার প্রাইজ নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্টশিপ নেয়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের বহুল শ্রমিক সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের স্যালারি একাউন্ট করার কথা বলে তাদের বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে। ডিবিবিএল এজেন্ট কর্তৃক আবেদনকৃত একাউন্ট ও এটিএম কার্ডসমূহ তৈরি হওয়ার পর গ্রাহকের নিকট পাঠানোর উদ্দেশ্যে স্ব-স্ব এজেন্টের নিকট হস্তান্তর করে। কিন্তু গ্রেপ্তারকৃত আসাদ কার্ডগুলো তাদের অজান্তে অপর গ্রেপ্তারকৃত আল আমিন বাবুর নিকট টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর করে। আল আমিন বাবু সংগৃহীত কার্ডগুলোতে ১০/২০ হাজার টাকা করে ক্রেডিট করে।
আল আমিন বাবু উক্ত টাকা এটিএম হতে ডেবিট করার সময় ডিবিবিএল এর আইটি অফিসার তথা চক্রের মূল হোতা মীর মোঃ শাহারুজ্জামান ওরফে রনি এর সাথে যোগাযোগ করেন। টাকা উত্তোলনের সময় এটিএম বুথ কর্তৃক একাউন্টের বিপরীতে যে জার্নাল সৃষ্টি হয় তা সংরক্ষণ সার্ভারে যাওয়ার আগে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের আইটি অফিসার সেটি পরিবর্তন করে দেন।
ডিবিবিএল এর কর্মকর্তা অভিযুক্ত শাহারুজ্জামান টাকা উত্তোলনের পূর্ব মূহুর্তে জার্নাল সংরক্ষণ সার্ভারের সাথে ইএসকিউ এটিএম মনিটরিং সফটওয়ার এর মাধ্যমে যে এটিএম বুথ সমূহ পরিচালিত হয় সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সফটওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এটিএম বুথের টাকা উত্তোলনের সময় যে জার্নাল সৃষ্টি হয় তা সার্ভারে জমা হয় না।
এরই ধারাবাহিকতায় অভিযুক্ত শাহারুজ্জামান ‘সাকসেসফুল’ মেসেজকে ‘আনসাকসেসফুল’ মেসেজে রূপান্তরিত করার ফলে উক্ত মেসেজ পরবর্তীতে জার্নাল সার্ভারে গেলেও তা আর সাকসেসফুল মেসেজ হিসেবে গণ্য হয় না। অর্থাৎ বুথ থেকে টাকা উত্তোলিত হওয়ার পরও মেসেজ আনসাকসেসফুল দেখায়।
গ্রেপ্তারকৃত আল আমিন বাবু পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ করে যে, সে এটিএম বুথ হতে টাকা উত্তোলনের সময় তার ব্যালেন্স কেটে নিয়েছে কিন্তু টাকা হাতে পায় নাই। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দায়িত্বরত অফিসার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেন। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অফিসার যখন দেখেন যে, টাকা উত্তোলনের জন্য কার্ডটি এটিএম বুথে প্রবেশ করানো হয়েছিল কিন্তু জার্নালটি ‘আনসাকসেসফুল’ তখন উক্ত অফিসার অভিযোগের প্রেক্ষিতে উক্ত একাউন্টে ব্যালেন্স সমন্বয় করে দেন।
মীর মোঃ শাহারুজ্জামান ওরফে রনি দেশের বাহিরে আত্মগোপন করায় তাকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে বলে জানান গোয়েন্দা এ কর্মকর্তা। গ্রেপ্তারকৃতদের মতিঝিল থানার মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস