ভিডিও দেখে বোমা বিশেষজ্ঞ জঙ্গি সাব্বির
অনলাইনে ভিডিও দেখে বোমা বানানো শেখে নব্য জেএমবির নেতা সাব্বির। তার প্রকৃত নাম সাব্বির হোসেন (২১)। সাংগঠনিক নাম বামছি ব্যারেক ওরফে মেজর বামছি ওরফে আবু হাফস আল বাঙ্গালী ওরফে জন ডেভিড। নিজ সংগঠনের সামরিক শাখার আঞ্চলিক কমান্ডার সে। তার অধীনে আছে অন্তত ২০ জন সক্রিয় সামরিক সদস্য।
সাব্বির ইতোমধ্যে ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে টাঙ্গাইলে একটি পূর্ণাঙ্গ মজলিশ গঠন করেছে। তার নেতৃত্বে বুধবার পাঁচ জঙ্গি রাজধানীর মিরপুরে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জড়ো হয়েছিল। তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের জালে ধরা পড়েছে সে। তার সঙ্গে ধরা পড়েছে আর দুই সহযোগী।
তারা হলো- রবিউল ইসলাম ওরফে উসমান (২২) এবং নাঈম মিয়া (১৯)। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে কাউসার মিয়া ওরফে আবু মানসুরা ওরফে উসামা (২৭) এবং জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ফোরকান (২৭)।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, বুধবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মিরপুরের পল্লবী থানাধীন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়াম এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরির সরঞ্জাম, বিস্ফোরক পদার্থ এবং বোমা তৈরির ম্যানুয়াল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের শুরুতেই তারা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
বলেছে, তাদের আইইডি তৈরির মূল কারিগর হলো সাব্বির। তার সহযোগীদের কাছে হাতে বানানো আইইডি তৈরির সরঞ্জামাদি আছে। সে নব্য জেএমবির ময়মনসিংহ অঞ্চলের সামরিক শাখার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। পাশাপাশি জঙ্গি কার্যক্রম বিস্তৃত করার জন্য সদস্য সংগ্রহ করছিল। তুরস্কে অবস্থানরত বাংলাদেশের নব্য জেএমবির আমীর মাহাদী হাসান জন ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তার। জঙ্গি কার্যক্রমে অর্থায়ন এবং সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে তৎপর ছিল সে।
সিটিটিসি জানায়, সাব্বিরের বাড়ি জামালপুরে। সে ২০১৬ সালে অনলাইন দাওয়াতের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করে। যোগদানের পর থেকে সে অনলাইন এবং অফলাইনে দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। সাব্বির ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল এবং কুড়িগ্রাম জেলায় কয়েক দফা সফর করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে টাঙ্গাইল ইসলামিক মজলিশ গঠন করে সে। জেএমবির কারাবন্দি নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার। বোমা মিজানের ১৩ বছরের মেয়েকে তার সংগঠনের ‘জিহাদি ভাইয়ে’র সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। বোমা মিজানের ১৫ বছর বয়সী ছেলে নাঈমের সঙ্গে সে একাধিকবার দেখা করে। নাঈমকে জঙ্গিবাদে জড়াতে প্রলুব্ধ করে সাব্বির।
সিটিটিসি আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত অপর দুই আসামির রবিউল ইসলাম ওরফে উসমান এবং নাঈম মিয়া অনলাইন ও অফলাইনে সদস্য সংগ্রহ করছিল সাব্বিরের নেতৃত্বেই।
সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান জানান, বুধবারের অভিযানের ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছেন সিটিটিসি বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের এসআই রফিক উদ্দিন। ওই মামলায় আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তারা এরই মধ্যে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে জঙ্গি কার্যক্রম সংক্রান্ত আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার একেএম রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, নিজেদের তৈরি আইইডি ব্যবহার করে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম বেগবান করতে একত্রিত হয়েছিল তারা। তুরস্কে অবস্থানরত জেএমবি প্রধান আমীর মাহাদী হাসান জন ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালী নিজে সাব্বিরকে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস