রানা প্লাজা: ৫ বছর আগে অভিযোগ গঠন,শুরু হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ
আট বছর আগে মামলা, অভিযোগ গঠনেরও প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল; তবুও সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি। আভিযোগ আছে, এ ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে দুটি মামলা দায়ের হলেও এখনো কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
প্রায় পাঁচ বছর আগে এই দুই মামলার অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন বিচারিক আদালত। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হলো, দুই মামলায় এখন পর্যন্ত একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্য দিতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে আলোচিত মামলা দুটির বিচারিক কার্যক্রম কবে শুরু হবে তা নিয়েই প্রশ্ন সচেতন মহলের।
আদালত সূত্র জানায়, হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের পর এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যান আটজন আসামি। এদের মধ্যে ছয়জনের আবেদন নিষ্পত্তি হয়। দুই আসামি সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী ও সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাতউল্লাহর পক্ষে করা আবেদনে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তাদের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখনো হত্যা মামলার সাক্ষ্য নিতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। আসামিদের আবেদন নিষ্পত্তির জন্য চারবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
অপরদিকে ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কয়েকজন আসামি রিভিশন আবেদন করেন। এদের মধ্যে আসামি ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে মামলাটি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। বাকিদের রিভিশন আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় এ মামলায়ও সাক্ষ্য শুরু করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ।
হত্যা মামলার বিষয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ গঠনের পর আটজন আসামি উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলাটি স্থগিতের আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ছয়জনের আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। দুই আসামি সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাত উল্লাহ এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলীর পক্ষের আবেদন এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তাদের আবেদনের ফলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। আবেদন নিষ্পত্তির জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে চার বার চিঠি দেয়া হয়েছে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অফিস থেকে। চিঠি দেয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি। তাই মামলার বিচার প্রক্রিয়ার কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।’
ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, ‘কয়েকজন আসামি অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন আবেদন করেন। তাদের মধ্যে নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বজলুস সামাদ ও সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের রিভিশন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। অপরদিকে ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামের রিভিশন মঞ্জুর করে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। রিভিশনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা যাবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুই মামলায় প্রায় পাঁচ বছর আগে অভিযোগ গঠন হয়েছে। কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। তাদের পক্ষে আবেদনের ফলে স্থগিতাদেশ থাকায় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা ছাড়া সবাই জামিনে আছেন। মামলায় কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না, আর আসামি রানাকে জামিনও দিচ্ছেন না আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের উচিত দ্রুত স্থগিতাদেশ নিষ্পত্তি করে মামলার কার্যক্রম চালু করা।’
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা ভবন। এর নিচে চাপা পড়েন সাড়ে পাঁচ হাজার পোশাক শ্রমিক। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’ মামলা করেন।
দুই মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার সাবেক টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা খান, সাবেক সচিব মো. আবুল বাশার, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান।