বসুন্ধরার এমডিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত করবে পিবিআই


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
বসুন্ধরার এমডিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত করবে পিবিআই
  • Font increase
  • Font Decrease

মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মোসারাত জাহান মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে মামলা দুটি আদালতে দায়ের করেন।

সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ আদালতে মামলা দুটি দায়ের করা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আনভীরের বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, আনভীরের মা আফরোজা বেগম, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা, শারমীন, সাইফা রহমান মীম, কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা এবং ইব্রাহীম আহমেদ রিপন।

মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া বলেন, আনভীরসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা এবং ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে হত্যা মামলা ৩০২/৩৪ এবং ধর্ষণের মামলা সেকশন ৯/১ এবং ৯/২ এ।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ আদালতের বিচারক বেগম মাফরুজা পারভীন মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আগামী ৬ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে সোমবার দুপুরে মোসারাত জাহান মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহানের জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর পাবলিক প্রসিকিউটর রেজাউল করিম গণমাধ্যমে বলেন, কলেজছাত্রী মোসারাত জাহানকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে আটজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (২), দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা করেন বাদী নুসরাত জাহান। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গত ২৬ এপ্রিল রাতে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার দিন রাতেই মুনিয়ার বোন নুসরাত বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়ের পর ২০১৯ সালে আনভীর মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার মুনিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। তখন আমার বোনকে (মুনিয়াকে) আনভীরের জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন তার মা।

এ ঘটনার পর আনভীর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। গত মার্চের ১ তারিখে গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্যাটটি ভাড়া নেন আনভীর। ১ মার্চ থেকে মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন এবং আনভীর মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন।

গত ২৩ এপ্রিল ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় ইফতার পার্টিতে গিয়ে মুনিয়া ছবি তোলেন। ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে সেই ছবি পোস্ট করলে সেটি আনভীরের পরিবারের একজন দেখে ফেলেন এবং আনভীরকে জানান। বিষয়টি নিয়ে আনভীর মুনিয়াকে বকাঝকা করেন এবং হুমকি দেন। ২৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে মুনিয়া তার মোবাইল নম্বর থেকে নুসরাতকে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আনভীর আমাকে বিয়ে করবে না, সে শুধু আমাকে ভোগ করেছে। এছাড়া আমাকে সে ‘মনে রাখিস তোকে আমি ছাড়ব না’ বলে হুমকি দিয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, মুনিয়া নুসরাতের কাছে চিৎকার করে বলেন, ‘যেকোনো সময় আমার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তোমরা তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসো।’

মোসারাত জাহান মুনিয়া মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন মোসারাতের বড় বোন নুসরাত জাহান। এ মামলায় গত জুলাই মাসে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় গুলশান থানা পুলিশ। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গত ১৮ আগস্ট পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।

মুনিয়ার ‘আত্মহত্যা’য় প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা মামলা থেকে ইতিপূর্বে সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দেন আদালত।

প্রকৌশলনিউজ/সু