আদালতের সময় নষ্ট করায় তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা
রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার এ আদেশ দেন।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, শারীরিক সম্পর্ক হলেও জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। সেখানে অভিযোগকারীরা স্বেচ্ছায় আসামিদের সঙ্গে মদ্যপান করেন এবং ড্যান্সে অংশ নেন। আসামিদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় শয্যাসঙ্গী হন অভিযোগকারী সহ অপর তরুণী। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হলেও জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি আদালত পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় অতিবাহিত হলে ধর্ষণ মামলা যেন না নেওয়া হয়।
আদালত আরও বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আদালতের সময় নষ্ট হয়েছে।
এছাড়া ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার রায়ের পর্যবেক্ষণে তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেন।
আদালত বলেন, একটা পার্টিতে অংশ নিয়ে ইচ্ছাকৃত শয্যাসঙ্গী হলেন, তার ৩৪ দিন পর মামলা হলো এবং ৩৮ দিন পর মেডিক্যাল হলো। মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুই তরুণীর বয়স ২২/২৩ বছর, তারা নিয়মিত যৌনসম্পর্ক করতেন।
সাক্ষী ও জবানবন্দিতেও তারা নিজেদের অবিবাহিত দাবি করলেও শারীরিক সম্পর্কের বিষয় উঠে আসে। ঘটনার কোনো সাক্ষী নেই, আলামত নেই, তরুণীদের কাপড়ে কোনো পুরুষের সিমেন্স পাওয়া যায়নি। তথাপি চার্জশিট দিয়ে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠানো হয়েছে। মোট ৯৪ কার্যদিবসের বিচারে আদালতের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। যে কারণে প্রকৃত ধর্ষণের মামলার বিচার ব্যাহত হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতের এই সময় নষ্ট করেছেন।
গত ২২ আগস্ট মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। চার্জশিটভুক্ত ৪৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
২০১৮ সালের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেন। ওই বছরের ১৩ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৬ মে বনানী থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে বনানী থানায় মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই প্রধান আসামি সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।