‘ফুলতলা অক্সিজেন ব্যাংক’ এ যেন বেঁচে থাকার প্রদীপ শিখা


সি এম শফিক, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
‘ফুলতলা অক্সিজেন ব্যাংক’ এ যেন বেঁচে থাকার প্রদীপ শিখা
  • Font increase
  • Font Decrease

করোনা মহামারির শুরু থেকেই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল চিত্র দেশ ও জাতির কাছে ফুটে ওঠে গণমাধ্যমের কল্যানে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনেও নিজ দলের সাংসদদের সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এতকিছুর পরও প্রত্যন্ত অঞ্চেলের কিছু সেচ্চাসেবী সংগঠনের কারনে এই মহামারি মোকাবেলা করার সাহস পাচ্ছে দেশের মানুষ। কিছু তরুণ এক্ষেত্রে সামনের সারিতে থেকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে কাজ করে যাচ্ছে করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতনতা তৈরি এবং মানবিক সহায়তা নিয়ে। তেমনি একটি সেচ্চাসেবী সংগঠন ‘ফুলতলা অক্সিজেন ব্যাংক’। 

করোনা মহামারির তৃতীয় ঢেউ এর সংক্রমন মূলত মারাত্বক আকার ধারন শুরু করে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই। এখনো সেই ধারাবাহিকতা চলছেই। বিশেষ করে ভারতীয় সীমান্তবর্তী খুলনা, রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মারাত্বক আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে খুলনা সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ। করোনা রোগীদের সংক্রমণ এবং মৃত্যু প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে এই বিভাগে। বিভাগের সবথেকে বেশি আক্রান্ত আবার বিভাগীয় জেলা খুলনাতেই। প্রায় সব উপজেলাতেই জালের মত ছড়িয়ে পড়েছে করোনার ভয়াল থাবা। এরই মাঝে গেলো মাসের শেষ দিকে ফুলতলা উপজেলার দামােদর ইউনিয়নের কিছু তরুণ মিলে গড়ে তুলেছে ‘ফুলতলা অক্সিজেন ব্যাংক’। যা এখন উপজেলার অসহায় গরীব মানুষের কাছে বেঁচে থাকার প্রদীপ শিখা। 

এই অক্সিজেন ব্যাংকের স্বপ্নদ্রস্টা রায়হান হাসান, সাদ্দাম, দিশান, কৌশিক,জীম এবং পার্থ। আরো কিছু বন্ধুদের নিয়ে সিনিয়র ভাইদের সাথে পরামর্শ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দিয়ে দিলেন একটা সাহসী স্ট্যাটাস। মুহুর্তেই সাড়া পড়ে গেলে পুরো ফুলতলা উপজেলাতে। এগিয়ে আসলেন স্থানীয় কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তি। শুরু হলো কাজ করা। স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জহির উদ্দিন রাজীব ভুইয়ার দেয়া কমপ্লিট ৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে শুরু হলো মানুষকে সেবা দেয়া। বর্তমান অক্সিজেন সিলিন্ডার সংখ্যা ৯টি। যা চাহিদার তুলনার খুবই সামান্য।

রাত নেই দিন নেই কিছু তরুণ ছুটে চলেছে মোটরসাইকেলে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে। গায়ে পরা সাদা পিপিই, হাতে হ্যান্ডগ্লাভস আর মুখে মাস্ক। এ যেন আকাশ থেকে নেমে আসা একদল সাদা আবাবিল পাখি। যাদের কোনো ভয় নেই, নেই পরিবারের প্রতি পিছুটান। শুধু মানব সেবাতেই যেন এদের মনের ক্ষুধা মেটে। তাইতো কারো ছোট্ট সন্তান বাবাকে ডেকেও ঘরে রাখতে পারছে না। কারন তাদের পূর্বসূরী বা প্রতিবেশি যে আজ মহামারিতে আক্রান্ত। ঘরে মায়ের আচল ধরে বসে থাকার সময় তো তাদের নেই। তারা শুধু মানুষকে কিভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করা যায় তাই নিয়ে দিনাতিপাত করছে। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন প্রতিনিয়ত তাদের নিরাপত্তা দিয়ে চলেছে।

মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে এই ‘ফুলতলা অক্সিজেন ব্যাংক’ এখন খুলনার ফুলতলা উপজেলার মানুষের ভরসার প্রতিকে পরিণত হয়েছে। তবে কিছু সংকটও রয়েছে। আরো বেশি পরিমান অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলে আরো বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া যেত এই তাদের ভাবনা। সমাজের বিত্তবানরা যদি সামান্য সহযোগিতা দিয়ে ওদের পাশে থাকে তাহলে নিশ্চয় একদিন ফুলতলা উপজেলা হবে করোনা মুক্ত। মুক্ত বাতাসে আবারো কৃষক তার মাঠে ফসল ফলাতে পারবে। চাষী তার ঘেরের মাছ বাজারে তুলে আবারো সন্তানদের দুধে ভাতে রাখার কথা চিন্তা করতে পারবে। মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় গিয়ে প্রার্থনায় মিলিত হবে সবাই। কবি গুরুর শ্বশুর বাড়ী রবীন্দ্র কমপ্লেক্সের মিলনমেলায় আবারো সবার দেখা হবে। বেজে উঠবে সেই কালজয়ী গান, ‘আয় আরেকটিবার আয়রে শখা...........

আপনি চাইলেও ফুলতলা অক্সিজেন ব্যাংকে সহযোগিতা পাঠাতে পারেন। উপরে দেয়া ছবিতে সংযুক্ত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে অথবা নগদ, বিকাশ, রকেট কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে। হোক না সেটা ছোট কিংবা বড়। আপনার টাকায় হয়তবা একজন করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির অক্সিজেন চাহিদা পুরণ হতে পারে। 

ভালো থাকুক বাংলাদেশ, ভালো থাকুক ফুলতলাবাসী। সুস্থ্য হোক প্রতিটি প্রাণ। মেতে উঠুক আনন্দে। www.prokousholnews.com এর পক্ষ থেকে ফুলতলা অক্সিজেন ব্যাংকের প্রতি রইলো শুভ কামনা।