প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান ও সুরক্ষায় বরাদ্ধ বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন
আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছে। এক মানববন্ধনে বক্তারা বলেছেন, বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রতিবন্ধীদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে এবং এই সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব সরকার বলে আমারা বিশ্বাস করি। যা আমারা দেখেছি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন পাশের মাধ্যমে। কিন্তু এর পরে আমরা আরে তেমন কোন অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।
শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ২০২১-২০২২ বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রতিবন্ধী মানুষকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী মানুষের সংগঠনসমূহ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে একাধিক ওয়েবিনার, সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা দেয়া সত্ত্বেও তার একটিও আমলে নেয়া হয়নি। ফলে, সাধারণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা খুবই মর্মাহত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব সরকারের কাছে প্রতিবন্ধী মানুষের এর চেয়ে বেশি প্রত্যাশা।
ডাব্লিউডিডিএফ এর রওনক জাহান বলেন, কোভিড ১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার নানামূখী সহায়তা ও প্রণোদনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা (৭৫০ টাকা) প্রাপ্তির কারণে সরকারি এ সকল সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, গত দু’বছর যাবত বাজেটে আমাদের দাবি দাওয়ার কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
এইচডিডিএফ এর রাজিব শেখ বলেন, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির শ্লথগতি, শিক্ষা ব্যবস্থায় সেশন জটে পড়ার সংকট ও করোনা ভাইরাস জনিত অভিঘাতে প্রতিবন্ধী মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। কোভিড ১৯ এর কারণে সৃষ্ট মহামারিতে যেখানে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত সেখানে বলা বাহুল্য এদেশের প্রতিবন্ধী মানুষেরা কতটা মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এবং এই আইনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেই কোন সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ। অথচ সরকার নিজে ‘সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র ২০১৫’ অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতার পরিমান ১৫শ টাকায় উন্নীত করায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ডাব্লিউবিবি ট্রাষ্ট এর শানজিদা আক্তার বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব সরকার সেটা আমরা প্রমান পেয়েছি আইন পাশের মাধ্যমে। কিন্তু এখন সময় এসেছে আইন বাস্তবায়নের। গত দু’বছরে প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর বদলে ভাতা প্রাপ্তির আওতায়ই বাড়ানো হচ্ছে যা প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনধারণে কোন প্রভাব ফেলছে না। মাসে ৭৫০ টাকা করে ভাতা দৈনিক আধা কেজি চালের দামের সমান বরাদ্দ। এই ক্রান্তিকালিন সময়ে কোন সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া যৌক্তিক সহযোগিতা হতে পারে না।
মানবন্ধনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বি-স্ক্যানের সাধারন সম্পাদক সালমা মাহাবুব তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব প্রতিবন্ধী মানুষদেরকে প্রতিনিয়ত হতাশ করে তুলেছে। তারপর প্রতিবন্ধীতার ভিত্তিতে বৈষম্যের কারণে প্রতিবন্ধী চাকরী প্রত্যাশীদের আশার বাধ যেন ভেঙ্গে পড়ছে। সরকারি ক্ষেত্রে কোটার ক্রমহ্রাসমানতা ও বেসরকারি ক্ষেত্রে অবাস্তব প্রণোদনা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি হচ্ছেনা। এছাড়াও ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোন সরকারি উপাত্তে খুঁজে পাওয়া যায়না। ফলে সরকারের তথ্য-উপাত্তের মতো বাজেটে অদৃশ্য রয়ে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী মানুষ। সরকার চাইলেই মাত্র আরো ৬০০ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ করলে প্রতিবন্ধী মানুষের ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা করা সম্ভব। আশা করি প্রতিবন্ধী মানুষের প্রাণ প্রিয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী মানুষের এই প্রাণের দাবি পূরণ করবেন।
বি-স্ক্যানের সমন্ময়কারী ইফতেখার মাহমুদের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন এইউডিসি, বি-স্ক্যান, বিডিডিটি, সিবিডিসিপিও, ডিসিএফ, ডিডিআরসি, এইচডিডিএফ, এনসিডিডব্লিউ, এনজিডিও, পিএনএসপি, এসডিএসএল, সম্মেলন ফাউন্ডেশন, এবং ডব্লিউডিডিএফ সহ ১০ ডিপিও সংগঠনের প্রতিনিধীরা।
মানববন্ধনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধান ৭ দফা দাবি পেশ করা হয়।