ফিলিপ-এলিজাবেথ: যে প্রেমের গল্প অমর হয়ে থাকবে


প্রকৌশল নিউজ ডেস্ক :
ফিলিপ-এলিজাবেথ: যে প্রেমের গল্প অমর হয়ে থাকবে

ফাইল ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রিন্স ফিলিপ ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রেমের গল্পটা রাজকীয় তো বটেই, চমকও কম নয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএন, বিবিসি অবলম্বনে পাঠকদের জন্য তুলে ধারা হলো রাজকীয় এক প্রেমের গল্প।

রানি এলিজাবেথ ছিলেন ষষ্ঠ কিং জর্জের কন্যা। আর প্রিন্স ফিলিপ গ্রিসের ক্ষমতাচ্যুত রাজার ভাইপো। এলিজাবেথ থাকতেন রাজপ্রাসাদে। আর ফিলিপের পরিবার ছিলেন নির্বাসনে। ১৯৪৭ সালে দুজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ৭৪ বছরের বিবাহিত জীবনে রানি এলিজাবেথ বেশির ভাগ সময়ই ব্যস্ত থেকেছেন রাজকীয় দায়িত্ব পালনে। রানির সেই জীবনের সঙ্গে অনেকটাই মানিয়ে চলতে হয়েছে প্রিন্স ফিলিপকে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলাহয়, ১৯৩৯ সালে প্রিন্স ফিলিপ ও রানি এলিজাবেথের প্রথম দেখা। সে সময় এলিজাবেথ ছিলেন ১৩ বছরের কিশোরী। ১৮ বছরের ফিলিপ তখন ব্রিটানিয়া রয়্যাল নেভাল কলেজের ক্যাডেট। তবে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দুজনের দেখা হয় আরও কম বয়সে। ৭ বছরের এলিজাবেথ আর ১২ বছরের ফিলিপের প্রথম দেখা হয়েছিল একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে।

রানির আত্মীয় মার্গারেট রোডেস ২০১১ সালে অটোবায়োগ্রাফি ‘দ্য ফাইনাল কার্টেসি’তে লিখেছেন, প্রথমে এলিজাবেথই ফিলিপের প্রেমে পড়েন। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দুজনের মধ্যে চলছিলো চিঠি বিনিময়। ফিলিপ সে সময় রয়্যাল নেভিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর চলমান বিস্ফোরণ ও অরাজকতার কারণে এলিজাবেথ এক প্রাসাদ থেকে অন্য প্রাসাদে অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন। সে সময় উইন্ডসর ক্যাসেলে ছোট বোন মার্গারেটের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন এলিজাবেথ। সে সময় এলিজাবেথ ও তার বোনের দেখাশোনার ভার পড়ে গভর্নেস ম্যারিয়ন ক্রফোর্ডের ওপর। ‘দ্য লিটল প্রিন্সেস’নামের স্মৃতিকথায় ম্যারিয়ন লেখেন, ফিলিপের নীল চোখ ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন এলিজাবেথ। তবে যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত বিয়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন দুজন।

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে ১৯৪৭ সালে এলিজাবেথ ও ফিলিপের বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। তবে সে সময় কেউই ভাবেননি এত অল্প সময়ের মধ্যে এলিজাবেথকে রানির দায়িত্ব নিতে হবে। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যেই এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ কিং জর্জের মৃত্যু হয়। ডিউক অব এডিনবার্গ ফিলিপের স্বপ্ন ছিলো নৌবাহিনীতে তার ক্যারিয়ার গড়ে তোলার। বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে এলিজাবেথকে রানির দায়িত্ব নিতে হয়। তিনি হয়ে ওঠেন কুইন এলিজাবেথ।

একরকম চাপের মুখেই নৌবাহিনী ছাড়তে হয় ফিলিপকে। ১৯৯২ সালে এক সাক্ষাৎকারে ফিলিপ বলেন, আমি নৌবাহিনীতেই থাকতে চেয়েছিলাম। নৌবাহিনী থেকে পদত্যাগের ঘটনাকে তিনি হতাশাজনক বলে অভিহিত করেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, প্রিন্স ফিলিপ ও রানি এলিজাবেথের বিবাহিত জীবনে বড় ধরনের কিছু অশান্তি ছিলো। নেটফ্লিক্সের ‘দ্য ক্রাউন’শোতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে ফিলিপ রানির সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রতারণার ঘটনাও ঘটিয়েছিলেন।

সব বিবাহিত জীবনেই কমবেশি অশান্তি থাকে। সেসব কাটিয়ে উঠে বা সেগুলো সঙ্গে নিয়েই চলছিল ফিলিপ ও এলিজাবেথের জীবন। তারা একসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। তাদের চার সন্তান রয়েছে। আট নাতি–নাতনি রয়েছে। আছে ১০ জন প্রপৌত্র।

সাময়িকী ‘টেটলারে’ব্রিটিশ রাজপরিবারের জীবন নিয়ে ধারাবাহিক লেখায় জানা যায়, দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিলো কিছুটা খুনসুটিরও। রানি এলিজাবেথকে প্রিন্স ফিলিপ কখনো ডাকতেন ‘সসেজ’। আবার কখনো বা শুধুই বলতেন ‘ডার্লিং’।

তাদের সুখ–দুঃখের বিবাহিত জীবনের ইতি হয়েছে গত শুক্রবার। ৯৯ বছর বয়সে মারা গেছেন প্রিন্স ফিলিপ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বয়স এখন ৯৪ বছর।