রোহিঙ্গা সমস্যা: দিল্লীর ভূমিকায় সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
রোহিঙ্গা সমস্যা: দিল্লীর ভূমিকায় সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ
  • Font increase
  • Font Decrease

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির সভাপতি প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূমিকা নিয়েও। 

বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারতের দ্বীমুখী ভূমিকায় সংসদীয় কমিটির সভাপতি অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি তাদের ভূমিকা দুঃখজনক বলেও উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া বৈঠকে ভাসানচরে ‘চর’ শব্দের কারণে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

বৈঠকে ইথিওপিয়ায় বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, নিজাম উদ্দিন জলিল (জন), কাজী নাবিল আহমেদ, মো. হাবিবে মিল্লাত এবং মো. আব্দুল মজিদ খান অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইথিওপিয়ায় নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক অনেক আলোচনা হলেও সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ইতিবাচক কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না বরং মাল্টিলেটারাল সাপোর্ট দিন দিন কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন এবং মিয়ানমারকে মিসাইল সরবরাহ করে প্রকারান্তরে মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে। ভারতের এই দ্বিমুখী ভূমিকা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একটি অন্তরায়- যা খুবই দুঃখজনক।

ওই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটি সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার এবং এটি সমাধানের দায়িত্ব তাঁদের। কিন্তু এটা সমাধানের ক্ষেত্রে তাঁদের আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বর্তমানে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) একটি মামলা চলমান আছে, যা পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর কাছে আর্থিক সহায়তা চাওয়া হলেও তেমন কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তবে আইসিজে এর অন্তবর্তীকালীন রায় বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। বিভিন্ন মিটিংয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও বাস্তবে তারা কোনো কথাই রক্ষা করছে না। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর যথাযথ ভূমিকা পালন করলে সমস্যাটি সমাধানের পথ উন্মুক্ত হতো।

ভাসানচর নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় ২০১৮ সালে একটি প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠান ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আবাসন তথা বিল্ডিং নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে যার ভিত্তিতে সেখানে ১৭ ফুট উচ্চতার বাঁধ নির্মাণ এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আবাসিক ভবন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাসপাতাল সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গা আগ্রহ প্রকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৩'শ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় সেখানে গিয়েছে। এখানে কোন রোহিঙ্গাকে জোর করে নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, স্থানটির নাম ‘ভাসানচর’ হওয়ায় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এটিকে ‘চর’ হিসেবেই প্রচার করে এবং চরগুলো সাধারণত জোয়ারের সময় পানিতে ডুবে যায় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি দ্বীপ এবং জোয়ারের সময় এটি ডুবে যায় না। এই ভুল ধারণা নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেখানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে আপত্তি জানিয়ে আসছে। তাই ভাসানচরের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ইউএন প্রটেকশন কমিটি কর্তৃক সরেজমিনে পরিদর্শনের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

বৈঠকে ভারত থেকে যথাসময়ে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিবাদন জানানো হয়। সেইসাথে পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাকসিন আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ এবং ভারত থেকে ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়াটি চলমান রাখতে যথাযথ তদারকি করার সুপারিশ করা হয়।