ভাঙা হতে পারে কমলাপুর স্টেশন!
বাংলাদেশ রেলওয়ের নাম নিলেই যে কোনো যাত্রীর চোখের সামনে ভেসে উঠবে ঢাকা স্টেশনের ঐতিহ্যবাহী নান্দনিক স্থাপনাটি। যা কমলাপুর স্টেশন নামেই পরিচিত।যা ভাঙ্গার প্রস্তাব উঠেছে। তবে, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। কমলাপুর স্টেশন স্থানান্তরের প্রস্তাব যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে অনুমোদন হলে ভাঙা হবে ৬৭ বছরের পুরাতন বাংলাদেশ রেলওয়ের আইকনিক ভবন হিসেবে পরিচিত কমলাপুর স্টেশন ভবনটি।
বর্তমান স্থানে স্টেশনটি থাকলে নির্মাণাধীন ঢাকা মেট্রোরেলের স্থাপনার আড়ালে পড়ে যাওয়া এবং কমলাপুর স্টেশনকে ঘিরে নেওয়া মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ প্রকল্পও বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এমন প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। ফলে স্টেশনটি কিছুটা উত্তরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা দিয়েছে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্টেশন ভবনটি ভাঙা পড়বে।
মঙ্গলবার রেল ভবনে এ–সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি সাপেক্ষে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বৈঠকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে কারিগরি দিক তুলে ধরে জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজিমা করপোরেশনের নেতৃত্বে একটি সাবওয়ার্কিং গ্রুপ।
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণকাজ চলমান। এর শেষ স্টেশনটি পড়েছে কমলাপুর স্টেশনের ঠিক সামনে। মেট্রোরেলের পথ (রুট) পরিবর্তিত হবে নাকি কমলাপুর স্টেশন সরানো হবে, এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল।
রেল কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, মেট্রোরেল কমলাপুর স্টেশনের সৌন্দর্যহানি করবে। তাই রুট পরিবর্তন করা হোক। কিন্তু মেট্রোরেলের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) রুট পরিবর্তন করতে চাইছিল না।
ডিএমটিসিএলের বক্তব্য ছিল, রুট পরিবর্তন করলে দু–তিন কিলোমিটার পথ বেড়ে যাবে। এতে খরচও বাড়বে। এ ছাড়া মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। পরিবর্তন করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে।
শেষ পর্যন্ত জাপানের কাজিমা করপোরেশনের নকশা ধরে কমলাপুর স্টেশনটিই ১৩০ মিটার উত্তরে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে। আগের ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে। এতে মেট্রোরেলেরও কোনো পরিবর্তন করা লাগবে না। এখন প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হবে।
জানা গেছে কমলাপুর স্টেশন ঘিরে মাল্টিমোডাল হাব গড়ে তোলা হবে, যা শাহজাহানপুরসহ আশপাশের রেলের জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হবে। এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান কমলাপুর রেলস্টেশনের আদলেই নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পাঁচ বছরের মধ্যেই কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। বাস্তবায়ন শেষ হতে ১০ বছর লাগতে পারে। মেট্রোরেলের কারণে কমলাপুর স্টেশন আড়ালে পড়ে গেলে এর সৌন্দর্য আর থাকবে না। তাই সরিয়ে নেওয়াটাই উত্তম ভাবছে রেল কর্তৃপক্ষ।
প্রথমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করে মেট্রোরেল কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। মেট্রোরেল এবং এর সব স্টেশনই হবে উড়ালপথে, মাটি থেকে কমবেশি ১৩ মিটার ওপরে। এর ফলে শেষ স্টেশনটি বিদ্যমান কমলাপুর রেলস্টেশন ভবনের সামনের অংশ ঢেকে দেবে। এ ছাড়া বিমানবন্দর থেকে আরেকটি মেট্রোরেল কমলাপুরে এসে মিশবে। এটি অবশ্য হবে পাতালপথে। এ প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের কাজ চলমান। অন্যদিকে ২০১৮ সালে সরকারি–বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) কমলাপুর স্টেশন ঘিরে মাল্টিমোডাল হাব করার প্রকল্প সরকার নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়।