শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : বাংলাদেশের জেগে ওঠার দিন আজ


বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা :
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : বাংলাদেশের জেগে ওঠার দিন আজ
  • Font increase
  • Font Decrease

আজ ১৭ মে। ছয় বছরের নির্বাসন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের এই দিনে স্বদেশে ফিরেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গোটা দেশে গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যখন অবরুদ্ধ, সেই চরম অনিশ্চিত সময়ে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে তুমুল রোমাঞ্চকর একটি দিন। বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরেই পুনর্জাগরণ ঘটবে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সুশাসনের- বাংলার মানুষের এ বিশ্বাসই ছিল বদ্ধমূল। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, ‘ওই মহামানব আসে/দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে/মর্ত্য ধূলির ঘাসে ঘাসে...’ যেন হয়ে আছে ১৭ মের আবহ সংগীত।

শেখ হাসিনা সেদিন ফিরে এসেছিলেন এমন দুর্বহ শোক আর স্মৃতি নিয়ে যা পৃথিবীর যেকোনো সন্তানের জন্য, দেশপ্রেমিক মানুষের জন্যই ছিল গভীর বেদনা ও আনন্দের মিশ্র অনুভবে পূর্ণ। 

তিনি ফিরেছিলেন দুর্বৃত্তের গুলিতে ঝাঁজরা পিতার বুকে লালিত পবিত্র স্বপ্নের দায় এবং আপন ভূমির মানুষের প্রতি আকাশসম ভালোবাসা নিয়ে। তিনি ফিরেছিলেন অনিকেত সময়, দেশের গণতন্ত্র ও মুক্তির বিপন্ন চেতনাকে মুক্তপ্রাণ শক্তি দেবেন বলে। তাই সে প্রত্যাবর্তন ছিল ঐতিহাসিক। কারণ তার প্রত্যাবর্তনের দিকে তাকিয়ে ছিল দেশ। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার উল্টোপথে ধাবমান বাংলাদেশকে ফেরানোর কোনো পথ ছিল না বাঙালির হাতে। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক বর্বর শক্তির পুনরুত্থানের বিপরীতে গণতন্ত্র, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক সমাজের স্বপ্নের পুনর্জাগরণে একজন প্রকৃত কাণ্ডারির জন্য অপেক্ষা করছিল মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই সেই কাণ্ডারি হয়ে ফিরেছিলেন তার জন্মভূমি বাংলাদেশে।

সেদিন বৃষ্টিস্নাত বিকেলে লাখ লাখ গণতন্ত্রকামী, মুক্তিপাগল জনতা ভালোবাসার ডালা হাতে শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেয়ার জন্য নেমে এসেছিল ঢাকার রাজপথে। বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। 
বিমানবন্দরে লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসার জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’

বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় শেখ হাসিনা ও বোন শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় ঘাতকের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা ফিরতে পারেননি দেশে। পরবর্তীতে ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লিতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় তাদের।