ইয়াশ মোকাবিলায় সরকারের লক্ষ্য ‘জিরো ডেথ’


নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইয়াশ মোকাবিলায় সরকারের লক্ষ্য ‘জিরো ডেথ’
  • Font increase
  • Font Decrease

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’ মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ‘বিগত দিনগুলোতে আমরা সুপার সাইক্লোন ফণী, বুলবুল, আম্পান মোকাবিলা করেছি। সবাইকে নিয়ে একযোগে কাজ করেছি। এবারও আমরা একসঙ্গেই কাজ করবো। উপকূলীয় এলাকা থেকে শতভাগ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে এনে আমরা এবার মৃতের সংখ্যা শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনতে চাই। আমাদের লক্ষ্য জিরো ডেথ।’ সরকার সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ওয়েল প্রিপেয়ার্ড।’

আজ শনিবার (২২ মে) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি কর্মসূচির পলিসি কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আবহাওয়া অধিদফতরের মহাপরিচালক  শামসুদ্দিন আহমেদসহ ক্যাবিনেট ডিভিশনের প্রতিনিধি, তথ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এলজিআরডি এর প্রতিনিধি, রেড ক্রিসেন্ট,  স্পারসোসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতর ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে এবং এর আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে এটি গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’ আগামী ২৬ মে নাগাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগেও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করে বিশ্ব দরবারে প্রসংশিত হয়েছি। এবারও মৃতের সংখ্যা জিরো রেখে আমরা উদাহরণ তৈরি করবো। কেউ যদি আশ্র‍য়কেন্দ্রে আসতে না চায় তাহলে তাকে জোর করে যে করে হোক নিয়ে আসতেই হবে। যাতে তার জীবন রক্ষা পায়।’

তিনগুণ বেশি আশ্রয়কেন্দ্র

তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী বা বুলবুল মোকাবিলায় আমর যে পরিমাণ আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার করেছিলাম, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমরা তার তিনগুণ বেশি ব্যবহার করেছি। প্রায় ১৪ হাজার ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে তিনগুণ বেশি আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার করা হবে। সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক ও সেনিটাইজার বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি এরমধ্যে যদি কোনও কোভিড আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় তাহলে তাকে আশ্রয়কেন্দ্রে আইসোলেশনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে করে কোনোভাবেই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কেউ সংক্রমিত না হয়।’

প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ‘গতকাল আমরা জানতে পারি একটি লঘুচাপ তৈরি হবে। আজ সেজন্য এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল পরিস্থিতি বুঝে দুই নম্বর সতর্কতা দেওয়া হতে পারে। এরপর পরশু তা বেড়ে চার নম্বর হতে পারে। আগামীকাল পর্যন্ত আমরা এর গতিপথ জানতাম ভারতের ভুবনেশ্বর, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূলের ওপর দিয়ে যাবে। আজ এটি আরও দক্ষিণে সরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনার ওপর দিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। তবে আজ পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। আগামীকাল পুরোটা বোঝা যাবে। ইতোমধ্যে গভীর সাগর থেকে জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসতে বলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে, ঝড়ে রাস্তায় গাছ পড়লে তা সরাতে কাজ করবে ফায়ার সার্ভিস। স্কাউটের প্রায় ছয় লাখ সদস্য কাজ করতে পারবে উপকূলে। এছাড়া নেভি, পুলিশ, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডসহ সবগুলো সংস্থা এই ঝড় মোকাবিলায় একযোগে কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

তিনি জানান, ইতোমধ্যে নগদ টাকার সহায়তা জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে। প্রচুর শুকনা খাবার মজুদ আছে। কালকের মধ্যে এলাকায় পৌঁছে যাবে এগুলো। পরিস্থিতি বুঝে আগামীকাল আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা করবো।