চেক পোষ্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন)। বন্ধ রয়েছে অফিস-আদালত, যানচলাচল। ঈদের পরের লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীতে মানুষের চলাচল এবং রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক কম। রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কড়া পহারায় রয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থানে চেক পোষ্ট বসিয়ে যানবহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। উত্তর সন্তোষজনক হলে ছেড়ে দিচ্ছে, না হলে মামলা বা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও ঈদের পর হওয়ার কারণে রাস্তায় মানুষ কম।তবে, রিকশা এবং অনেক প্রাইভেটকার চলতে দেখা গেছে। এলাকায় অলি গলিতে দোকানপাট ছিল খোলা। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজরে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
লকডাউনের কারণে প্রধান সড়কগুলোতে ভীড় কম থাকলেও অলিগলিতে মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। তাদের কেউ বের হয়েছেন বাজার করতে, কেউ সকালের নাস্তা করতে। আবার কেউবা বের হয়েছেন হাঁটতে। গলির কিছু কিছু দোকানের শাটার অর্ধেক খোলা রেখে বিক্রি চলছে। ছোট কয়েকটি হোটেলে বসে খাওয়ার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে। বিশেষকরে গলিতে গলিতে চায়ের দোকানগুলোতে আড্ডা থেমে নেই। মোহাম্মদপুরের এক চা-দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ দুইবার টহলে আসে তখন দোকানের শাটার বন্ধ রেখে দেই।
নবোদয় বাজারে ভিড় ঠেলে সবজি কিনে বাইরে আসা তসলিমার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ঘরে কোনো সবজি নেই তাই সবজি কিনতে এসেছি। এখানে তো সব দোকানেই ভিড়। সবাই আসছে। আমি এলে সমস্যা কী?’
মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে কথা হয় রিকশাচালক শাহানূরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গতকালের চেয়ে আজ রাস্তায় মানুষ বেশি। তবে আমাদের ভাড়া সেভাবে হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে দুই-একটা ভাড়া পাচ্ছি। বেশিরভাগ মানুষ রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছে।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলি, কলেজগেট, ধানমন্ডি, পাস্থপথ, শাহবাগ, কাওরানবাজার বাংলামটর, ইন্দিরা রোড, বিজয়সরণি, রাসেল স্কয়ারসহ বেশ কয়েকটি এলাকার পয়েন্টেই ব্যস্ত সময় পার করছেন ট্রাফিক পুলিশরা। রাজধানীর ধানমন্ডির আবহানী মাঠসংলগ্ন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আজ সকাল ৮টার পর থেকে সড়কে গাড়ির ভিড় বাড়তে থাকে। গতকালের তুলনায় আজ ব্যাক্তিগত যানবাহন ও মানুষের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। অকারণে যারা বাইরে বের হয়েছে, তাদের জরিমানা করছি।
কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. মোনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রতিটি যানবহন থামিয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করছি। আশানূরুপ উত্তর দিতে পারলে ছেড়ে দিচ্ছি আর না পারলে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছি অথবা মামলা দিচ্ছি।’
তিনি সবার নিকট অনুরোধ করে বলেন, ‘কেউ অপ্রয়োজনে বাহিরে আসবেন না।’
দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সরকার গত ১ জুলাই থেকে সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে। দেওয়া হয় ২১টি নির্দেশনা। বিধিনিষেধের পাঁচদিন পার হতে চললেও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিলো বুধবার (৭ জুলাই) মধ্যরাতে। এরমধ্যে বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই প্রেক্ষাপটে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
পরবর্তিতে সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ঈদের পর থেকে ‘কঠোর’ লকডাউনের ঘোষণা দেয় সরকার।