১৮ বছরের উর্ধ্বে সকলকেই ভ্যাকসিন দেয়া হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
১৮ বছরের উর্ধ্বে সকলকেই ভ্যাকসিন দেয়া হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ফাইল ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, "দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নির্বিঘ্ন রাখতে এবং অধিকাংশ নাগরিককে ভ্যাক্সিনের আওতায় নিয়ে আসতে এখন থেকে ১৮ বছরের উর্দ্ধে দেশের সকল নাগরিককেই ভ্যাক্সিন প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যেই সরকারের আইসিটি বিভাগের আওতাধীন জাতীয় সুরক্ষা অ্যাপে ১৮ বছরের উর্ধ্বে সকল নাগরিক যেন রেজিষ্ট্রেশন করতে পারে সে ব্যাপারে একটি নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।"

শনিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত "কোভিডের ৩য় ঢেউ মোকাবিলায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ, অক্সিজেন সংকট, হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা ও শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধ" শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সভা অনলাইন জুম অ্যাপে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সভায় দেশের মানুষকে কোভিড মহামারী থেকে রক্ষা করতে ব্যাপক ভ্যাক্সিনেশন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মুখে মাস্ক পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্রে বর্তমানে দেশের জন্য সব থেকে অপরিহার্য কাজ ভ্যাক্সিনেশনে দেশের সফলতার কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "বর্তমানে সরকারের হাতে ১ কোটির উপরে ভ্যাক্সিন রয়েছে। আগামী মাসের মধ্যেই আরো ২ কোটি ভ্যাক্সিন সরকারের হাতে চলে আসবে। এভাবে চীন থেকে ৩ কোটি, রাশিয়া থেকে ৭ কোটি, জনসন এন্ড জনসন এর ৭ কোটি ভ্যাক্সিন, এস্ট্রেজেনেকার ৩ কোটি ভ্যাক্সিন সহ আগামী বছরের শুরুর দিকের মধ্যেই সরকারের হাতে প্রায় ২১ কোটি ভ্যাক্সিন চলে আসবে। আশা করা যাচ্ছে, এই ভ্যাক্সিনের মাধ্যমেই দেশের অন্তত ৮০ ভাগ মানুষকে ভ্যাক্সিন দিতে সক্ষম হবে সরকার।"

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সভায় কোভিড মোকাবিলায় দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলির অবদানের কথা উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের কাছে কোভিডের ৩য় ধাপ মোকাবিলায় আরো বেড সংখ্যা বৃদ্ধির অনুরোধ জানালে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের পক্ষে সভাপতি মুবিন খান স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অন্তত ২০০০ নতুন কোভিড ডেডিকেটেড বেড বৃদ্ধি করার আশ্বাস দেন।

২০০০ নতুন বেড বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ জানান এবং কোভিড মোকাবিলায় সরকারের আরো কিছু নতুন উদ্যোগের কথা জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "আগামীতে ভারত থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০০ টন লিকুইড অক্সিজেন আমদানি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর সাথে ৪৩ টি অক্সিজেন জেনারেটর অর্ডার করা হয়েছে। আমেরিকান বাঙালিদের উপহার ২৫০ টি ভেন্টিলেটর ও কোভ্যাক্স এর ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ভ্যাক্সিন আজকেই দেশে চলে আসছে। আগামী ২৬/২৭ জুলাই দেশে চীনের আরো ৩০ লক্ষ ভ্যাক্সিন দেশে আসবে।"

গ্রামাঞ্চলে কোভিড রোগীদের সনাক্ত করার উদ্যোগ হিসেবে সরকার জেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এছাড়াও খুব দ্রুত ৪ হাজার চিকিৎসক, ৪ হাজার নার্স, ৫০০ এনেসথেসিয়া সহ প্রচুর টেকনোলজিস্ট নিয়োগের কাজও এগিয়ে চলেছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

প্রতিটি দেশই নিজ দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে, প্রশংসা করছে ; শুধু আমাদের দেশেই এই মহামারীর সময়েও দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সমালোচনা করে চিকিৎসক, নার্সদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে বিশেষ কিছু মহল। অন্যদিকে, দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে গোটা বিশ্ব যখন প্রশংসা করছে তখন দেশের কিছু মহল স্বাস্থ্যখাত নিয়ে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করে যাচ্ছে যা মোটেও কাম্য ছিলনা। খাদ্যে ভেজাল ক্যামিকেল মিশানো, নদী দখল, মানব পাচারের মতো বিষয়গুলি রেখে দেশের অতিমারি চলাকালীন অবস্থায় স্বাস্থ্যখাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে যেভাবে ঢালাওভাবে সমালোচনা করা হচ্ছে সেটিকে দুঃখজনক আখ্যা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমূখী। ২য় ঢেউ শেষ হতে না হতেই ধেয়ে আসছে করোনার ৩য় ঢেউ। করোনার মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোই উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এরূপ কোভিড-১৯ প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)’র সদস্যভুক্ত বড় বড় হাসপাতালগুলোতে ২৪০২ টি সিট ডেডিকেটেড ভাবে বৃদ্ধি করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে বলে সভায় প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এর পক্ষে বক্তারা জানান।

বেসরকারি সেক্টর বর্তমানে কোভিড যুদ্ধে সরকারের সাথে বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে বেসরকারি সেক্টরে হাসপাতালে প্রায় ৬০০ টি আইসিইউ, ৬০০ টি এইচডিইউ, ৭০০ মত হাই ফ্লোনেজাল ক্যানুলা এবং প্রায় ৬০০ মত ভেনটিলেটর দিয়ে কোভিড চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন বিপিএমসিএ’র সদস্যভুক্ত হাসপাতালগুলোর প্রতিনিধিগণ।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)’র সভাপতি বলেন, দেশের ক্রান্তিকালে যখনই সরকার ডেকেছে তখন দেশের প্রাইভেট মেডিকেল এগিয়ে এসেছে। আগামীতেও যখন সরকার ডাকবে প্রাইভেট মেডিকেলগুলো সেভাবেই সরকারের পাশে দাঁড়াবে। করোনাকালীন এই দুর্যোগেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আরোও ২ হাজার কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড শয্যা বৃদ্ধি করছে এবং ভবিষ্যতেও সরকারের পাশে থাকবে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত থেকে আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম খুরশিদ আলম, জাপান ইষ্ট ওয়েষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বিপিএমসিএ-এর চেয়ারম্যান ডাঃ মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, গ্রীণ লাইফ মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিপিএমসিএ-এর সহ-সভাপতি ডাঃ মাঈনুল আহসান, পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং বিপিএমসিএ-এর সহ-সভাপতি ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং বিপিএমসিএ-এর সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন খান, এমপি, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও পরিচালক, এফবিসিসিআই ও প্রেসিডেন্ট (ইনচার্জ), বিসিআই প্রীতি চক্রবর্ত্তী, সিআইপি এবং বিপিএমসিএ-এর যুগ্ম সম্পাদক মোঃ হাবিবুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তায়রুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতল এবং অর্থ সম্পাদক, বিপিএমসিএ আরও অনেকেই।