পরিবারের অগোচরেই পানিতে ডুবে বেশি মৃত্যু


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
পরিবারের অগোচরেই পানিতে ডুবে বেশি মৃত্যু
  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে ঊনিশ মাসে ৯৬৭টি ঘটনায় এক হাজার ৫১২ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে বলে একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এসেছে। এদের মধ্যে এক হাজার ৩৩২ জন পানিতে পড়ে মারা গেছে। বাকিদের মৃত্যু হয়েছে বিভিন্ন নৌযান দুর্ঘটনায় ডুবে অথবা আহত হয়ে। পরিবারের অগোচরে পানিতে ডুবে বেশি মৃত্যু হয় বলেও সেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে। 

২৫ জুলাই আন্তর্জাতিক ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’কে সামনে রেখে গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেছে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এ বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই তথ্য তুলে এনেছে গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ‘সমষ্টি’।  দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে— 'যে কেউ পানিতে ডুবে যেতে পারি, সবাই মিলে প্রতিরোধ করি।'

গত ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ বিষয়ে একটি ঐতিহাসিক রেজুলেশন গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ২৫ জুলাইকে বিশ্ব 'পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ' দিবস ঘোষণা করে।

'সমষ্টি' পরিচালক মীর মাসরুর জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ জানানো হয়। সমষ্টি জানিয়েছে, ঊনিশ মাসে পানিতে ডুবে যে এক হাজার ৩৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৯৭ শতাংশ অর্থাৎ এক হাজার ৩০৫ জনের মৃত্যু পরিবারের অগোচরে ঘটেছে। 

গবেষণায় বলা হয়, বর্ষাকালে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০২০ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৩২ জন মারা যায় অগাস্টে, আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২৪ জনের মৃত্যু হয় জুলাইয়ে। চলতি বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত পানিতে ডুবে ১২৮ জনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে মে মাসে ১১৪ ও জুনে ১৪২ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে।

সমষ্টির গবেষণায় বলা হয়, ১৯ মাসে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে কুড়িগ্রামে। সেখানে ১৯ মাসে অন্তত ৬৩ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। তাদের মধ্যে ২৬ জন নারী ও কন্যা শিশু এবং ৩৭ জন পুরুষ ও ছেলে শিশু। মৃতদের ৪৫ জনের বয়স ৯ বছরের কম। মারা যাওয়া ৬৩ জনের মধ্যে অন্তত ১৮ জন বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে।

কুড়িগ্রাম ছাড়া ১৭টি জেলায় ৩০ জন বা তার বেশি মানুষ পানিতে ডুবে মারা গেছে। এর মধ্যে নেত্রকোণায় ৫৪, কিশোরগঞ্জে ৪৩, চট্টগ্রামে ৪২, পটুয়াখালীতে ৩৯ এবং দিনাজপুর ও সিরাগঞ্জে ৩৭ জন করে পানিতে ডুবে মারা যায়।

১৯ মাসে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। যা আট বিভাগের মধ্যে সর্বেচ্চ। এ সময়ে বিভাগের সবগুলো জেলায় অন্তত ২৭১ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ২২৮ জন মারা গেছে ঢাকা বিভাগে। এছাড়া রংপুরে ২০১, রাজশাহীতে ১৮৫, ময়মনসিংহে ১৪১, বরিশালে ১২৭, খুলনায় ১০৮ ও সিলেট বিভাগে ৭১ জন মারা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর বিষয়টি একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বেশি গুরুত্বারোপ করেছে। সরকার ও দাতা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পাইলট ভিত্তিতে কয়েকটি জেলায় কিছু কিছু কাজ হচ্ছে। শিশু সুরক্ষার জন্য দেশব্যাপী এসব কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ বিষয়ে ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিপিপিটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।