প্রায় আট হাজার কোটি টাকায় ৫জি সম্প্রসারণসহ ১০ প্রকল্পের অনুমোদন


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
প্রায় আট হাজার কোটি টাকায় ৫জি সম্প্রসারণসহ ১০ প্রকল্পের অনুমোদন
  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫১ লাখ টাকায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে ১৮৮ কোটি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে পাওয়া যাবে ১৩৭ কাোটি টাকা।

মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গণভবন থেকে ভারচুয়ালি সভায় সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রকল্পগুলো হলোঃ

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৮৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলি ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতু প্রতিস্থাপন (রংপুর জোন)’ প্রকল্প। একই মন্ত্রণালয়ের ‘বাগেরহাট-রামপাল-মোংলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ‘দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের অডিও ভিজুয়াল দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট-ব্রিজিং (অতিরিক্ত অর্থায়ন, এলজিইডি অংশ)’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

একই মন্ত্রণালয়ের ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯০ কোটি টাকা।

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ‘পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩য় পর্যায়’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। এর জন্য ব্যয় হয়েছে ৬৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ১৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিদসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘শেখ হাসিনা সোলার পার্ক, জামালপুরে মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প, যা বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫-জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’ প্রকল্প। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। লোকসানের বৃত্তে আটকে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের নেটওয়ার্কের আধুনিকায়নে এবং প্রতিটি গ্রামে আধুনিক প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দিতে দেশজুড়ে ‘৫জি’ নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে সরকার। 

২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১৭ বছরে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটক এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনেছে। আর গত চার বছরেই টেলিটক লোকসান করেছে ৯৯৩ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুধুমাত্র দুই অর্থবছরেই প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখেছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১ কোটি ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪৬ কোটি টাকা মুনাফা করে টেলিটক।

বর্তমানে শহরাঞ্চলে বিদ্যমান টেলিটকের ‘৪জি’ নেটওয়ার্ক ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যন্ত প্রসারিত করে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সুলভমূল্যে দ্রুতগতির ফোরজি ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সরকার ঘোষিত লক্ষ্য অনুসারে, ২০২১-২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রামে ৫জি প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড। চারটি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।

লক্ষ্যগুলো হলো—দেশের প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক প্রযুক্তির সেবার আওতায় আনা, দেশের প্রতিটি তরুণকে প্রযুক্তি জ্ঞান দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর, প্রতিটি সেবাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়ে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল নিশ্চিত করা হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ যেন আধুনিক প্রযুক্তি সেবার উপকারভোগী হয়, তা নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করছে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ১০ কোটি জনগণ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ হার গ্রামে বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামে ব্যবহারকারীদের ক্রয়ক্ষমতা অনেকাংশে কম, ব্যক্তিমালিকানাধীন অন্যান্য মোবাইল অপারেটররা এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যবসায়িক ও মুনাফা বিবেচনায় নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা দিতে চায় না। ফলে গ্রামের মানুষেরা ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হলোঃ ৯ হাজার ৪১০ সেট টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম কেনা, তিন হাজার বিটিএস সাইট নির্মাণ, ট্রান্সমিশন হাবের জন্য ১০০ সাইট প্রস্তুতকরণ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেনা, কাস্টমার কেয়ার ৩০ সাইট ও আসবাবপত্র কেনা।

সরকার ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী, আগামী ২০২১-২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫জি প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ।

প্রকৌশলনিউজ/সু