দেশে ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে একনেকে ২৫৪১ কোটি টাকার প্রকল্প


প্রকৌশল প্রতিবাদক :
দেশে ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে একনেকে ২৫৪১ কোটি টাকার প্রকল্প
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতির পরিবেশ তৈরি এবং বিকাশের লক্ষ্যে ২ হাজার ৫৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল গভার্নমেন্ট ও অর্থনীতি সমৃদ্ধিকরণ (ইডিজিই) প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চলতি অর্থবছরের সপ্তম একনেক সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।

সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, একনেক সভায় ৭ হাজার ৪৪৭ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৬৮২ কোটি ২৮ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৫৩ কোটি ৮১ লাখ এবং বিদেশী ঋণ হিসেবে প্রকল্প সাহায্য পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৬১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অনুমোদিত ১০ প্রকল্পের মধ্যে ৫টি নতুন প্রকল্প রয়েছে এবং বাকী ৫টি সংশোধিত প্রকল্প।

ব্রিফিংয়ের সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিববৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল জানুয়ারি ২০২২ হতে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে ইডিজিই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প ব্যয়ের ২ হাজার ৫৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার মধ্যে ৩৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং বাকী ২ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি ক্লাউডভিত্তিক অবকাঠামো ও সফটওয়্যার প্লাটফর্ম স্থাপন করা হবে, যা আইটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ দক্ষতা ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।এছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অন্তত ১ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তরুণীরা সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো-চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ ও  প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়েনর জন্য ডিজিটাল নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, দেশে প্রায় ৪ হাজার আইটি ও সফটওয়্যার কোম্পানি রয়েছে এবং তারা গত অর্থবছরে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আইটি সামগ্রী ও সফটওয়্যার রপ্তানি করেছে। তিনি বলেন, ইডিজিই প্রকল্পটি দেশে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করবে। তিনি জানান, কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই প্রকল্পে ব্লক বরাদ্দ হিসেবে ৫১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

ব্লক বরাদ্দের বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, এই প্রকল্পে যে ব্লক বরাদ্দ থাকবে, সেটি কিভাবে ব্যবহার করা হবে, এর জন্য আইসিটি বিভাগ একটি পদ্ধতি বের করবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান,  নদী খনন ও নদীভাঙন রোধ সংক্রান্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে বলেছেন। এ ধরনের প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করতে হবে, প্রয়োজন হলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সেখানে সমন্বয় করবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল বিভাগে স্পোর্টস স্কুল নির্মাণ এবং ভূ-পৃষ্টের পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি অনুর্বর বা অব্যবহৃত জমি সর্বোচ্চ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন,গত এক যুগে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জন করায় একনেকে প্রধানমন্ত্রী ও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণের প্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশিকা অনুসরণ বিশেষ করে মাস্ক পরিধানের আহবান জানান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, প্রকল্পের ক্ষেত্রে সংশোধনী আনার প্রবণতা হ্রাসের জন্য আন্তরিক চেস্টা করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, প্রধানমন্ত্রী বিভাগের নামকরণের ক্ষেত্রে বৃহত্তর কুমিল্লাকে মেঘনা বিভাগ এবং বৃহত্তর ফরিদপুরকে পদ্মা বিভাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

দেশব্যাপী মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক সাংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মতামত ছিল যে এই মসজিদ কাম ইসলামিক সেন্টারগুলো যুবকদের এমনভাবে উদ্বুদ্ধ করবে যাতে তারা জঙ্গিবাদের দিকে না যায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ধান উৎপাদন বৃদ্ধি বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত সহিঞ্চু জাতের ধানের উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পের গুনগত মান বজায় রাখতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্দেশ প্রদান করেন।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ১০০টি মডেল মসজিদের কাজ প্রায় শেষের দিকে এবং বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হবে।

সমন্বতি অবকাঠামো উন্নয়ননের মাধ্যমে কুমিল্লা সিিট র্কপোরশেনের নাগরকি সুবধিা নশ্চিতি করর লক্ষ্যে একনেকে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো- নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের‘মোংলা বন্দর হতে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত নৌ-রুটের নাব্যতা উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ পর্যায় (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ক্রীড়া স্কুল প্রতিষ্ঠা (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের  ‘৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী এবং ফরিদপুর) বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন’ প্রকল্প, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘ প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প,  ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামো, মানব সম্পদ ও প্রযুক্তি দক্ষতা উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘সেচ অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্প এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট (সিএসএডব্লিউএমপি)’ প্রকল্প। সুত্র-বাসস।