ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে জমিসহ আরো ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী


ডেস্ক নিউজ
ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে জমিসহ আরো ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে আরো ২৬ হাজার ২২৯টি জমি সহ ঘর হস্তান্তর করেছেন।
 ‘দেশে একজন মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবেনা’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এর মাধ্যমে দেশের ৪৯২টি উপজেলার ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৫ জন মানুষ নিজের ঠিকানা পেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সবগুলো উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা হিসেবেও ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের কাছে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পাঁচটি জেলার পাঁচটি স্থানের সাথে সংযুক্ত ছিলেন।
স্থানগুলো হচ্ছে- লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলাধীন চরকলাকোপা আশ্রয়ন প্রকল্প, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলাধীন গৌরম্ভা আশ্রয়ন প্রকল্প, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলাধীন চর ভেড়ামারা আশ্রয়ন প্রকল্প, পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর উপজেলাধীন মহানপাড়া আশ্রায়ন প্রকল্প ও মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলাধীন জাঙ্গালিয়া আশ্রয়ন প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে দেশব্যাপী মোট ৬৭ হাজার ৮০০টি ঘর দেয়া হচ্ছে। এই ৬৭ হাজার ৮০০ ঘরের মধ্যে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে এবং বাকী ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি, ৬৩ হাজার ৯৯৯ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার তাদের মাথার উপর ছাদ পায়। আর গত বছরের ২০ জুন আশ্রায়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি পরিবার ঘর পায়।  
আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে সরকার ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই ও জলবায়ু সহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে ঘরগুলোর নক্সা পরিবর্তন করেন। এতে ঘরগুলোর নির্মাণ খরচ বেড়ে যায়। আর এজন্যই এখন গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষরা দুই শতাংশ জমির ওপর আরো উন্নতমানের টিন-শেডের আধা-পাকা ঘর লাভ করেছে।
ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই করে গড়ে তোলায় প্রতিটি ঘরের নির্মাণব্যায় ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত হয়।
সরকার ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই করে নির্মাণ করতে মজবুদ কড়ি কাঠ, পাথরের সর্দল ও রিইনফোর্স কংক্রিট কলাম (আরসিসি) পিলার ব্যবহার করা হয়েছে।
ড.কায়কাউস জানান, ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ঘরের নির্মাণের জন্য ৪০২৮ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় চর অঞ্চলের জন্য ১ হাজার ২৪২টির মতো বিশেষভাবে নক্সাকৃত ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় কিংবা বন্যার মতো যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে বিশেষভাবে স্থানান্তরযোগ্য করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে- যাতে করে বাড়িগুলো অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের আবাসনের জন্য সরকার খাস জমি ছাড়াও ১৯১ দশমিক ৭৯ একর জমি ক্রয় করেছে। বিশ্বের এটা একমাত্র দৃষ্টান্ত যে-কোন দেশের সরকার এ ধরনের কাজে জমি ক্রয় করেছে। জমি ক্রয়ের জন্য ১৩৪ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। ক্রয়কৃত জমিতে যে ঘরগুলো নির্মিত হয়েছে- সেখানে মোট ৮ হাজার ৪৬২টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে।

মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে সরকার এই প্রকল্পের জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে ৫ হাজার ৫১২ দশমিক ০৪ একর জমি উদ্ধার করে। সরকারের উদ্ধারকৃত এই খাস জমির বাজার মূল্য ২ হাজার ৯৬৭ দশমিক ০৯ কোটি টাকা। আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ থেকে মোট ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৭০টি পরিবারের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসিত পরিবারগুলোকে তিন মাসের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হবে। সরকারের নীতি অনুযায়ী, এই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা ও অসমর্থ মানুষদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য কমিউনিটি সেন্টার, মসজিদ, গোরস্থান, পুকুর ও রাস্তাঘাটও তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফলদ, বনজ ও ঔষধী গাছ লাগানো হয়েছে। গৃহহীনদের কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত আশ্রায়ন প্রকল্পটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট হচ্ছে- জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)’র আবাসনের সাথে এর একটি বিশেষ যোগাযোগ আছে। বিভিন্ন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে পথে কেবলমাত্র এই গৃহ নির্মাণ প্রকল্পটিই হতে পারে প্রধান পদচিহ্ন।

অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নারী ক্ষমতায়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এই আবাসন প্রকল্প ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রেখেছে।

ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে- ঢাকার নবাবগঞ্জ, মাদারীপুরের মাদারীপুর সদর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মানিকগঞ্জের ঘিওর, সাটুরিয়া, রাজবাড়ীর কালুখালী, ফরিদপুরের নগরকান্দা, নেত্রকোনার মদন, ময়মনসিংহের ভালুকা, নান্দাইল, ফুলপুর, ফুলবাড়িয়া, জামালপুরে বকশীগঞ্জ, চট্টগ্রামের পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, রামগঞ্জ, ফেনীর ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, তেঁতুলিয়া, বোদা।

এছাড়া ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, নীলফামারীর ডিমলা, নওগাঁর রাণীনগর, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, রাজশাহীর মোহনপুর, চারঘাট, বাঘা, বগুড়ার নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া নাটোরের বাগাতিপাড়া, পাবনার ঈশ্বরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু, সাতক্ষীরার তালা, মাগুরা সদর, শ্রীপুর, মোহম্মদপুর, শালিখা, ঝালকাঠির কাঠালিয়া, পটুয়াখালীর দশমিনা। সুত্র-বাসস।