মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে : প্রধানমন্ত্রী


সূত্রঃ বাসস
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংসদে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

তিনি বলেন, “বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। দেশের অর্থনীতিতে এই সংঘাতের কিছুটা প্রভাব আসতে পারে।”

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা আজ জাতীয় সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এসময় অধিবেশেনে সভাপতিত্ব করেন।

মধ্যপ্রাচ্য সংকটে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্যতা এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সূত্রে দেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পণ্য সরবরাহের সাপ্লাই-চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মূলত ইরান বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রপ্তানি সংশ্লিষ্ট পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে পণ্য তৈরি ও সরবরাহের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় রপ্তানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের আশঙ্কার বিষয়ে দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, প্রত্যেকে যেন মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখে এবং এ বিষয়ে নিজ নিজ করণীয় নির্ধারণ করে সে বিষয়ে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যে কোন সংঘাত বা সংঘাতের খবর জ্বালানি তেলের বাজারকে প্রভাবিত করে। এতে পণ্যের জাহাজ ভাড়া বাড়ে। যা আমদানি ব্যয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে। সার আমদানি ব্যয়ে প্রভাব পড়ে। এতে বিকল্প উৎস হিসেবে চীন, মরক্কো, তিউনেশিয়া, কানাডা, রাশিয়া ইত্যাদি দেশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে।

অর্থনীতিতে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব প্রশমনের লক্ষ্যে সরকার অগ্রিম পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হচ্ছে-চাহিদা-যোগানের ভারসাম্য ঠিক রাখা, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রদানে যেন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সেই উদ্দেশ্যে রেমিট্যান্স প্রদান সহজীকরণ করার পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রদানে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রাখা, রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর অভিঘাত সহনশীল করার পাশাপাশি দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখা, নিকট ভবিষ্যতে সরবরাহ সংকটের ফলে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে অর্থনীতির অগ্রাধিকারমূলক খাতসমূহ যেমন, কৃষি, এসএমই, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য গৃহীত স্বল্প সুদ ভিত্তিক পুন:অর্থায়ন স্কিমসমূহ অব্যাহত রাখা।

বাংলাদেশ সব ধরনের সংঘাতের বিপক্ষে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতির পিতার দেখানো পথে এবং নীতিতে বিশ্বাস করি- ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’

দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণে টিবিসির কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রশ্নে ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, টিসিবিতে যে লোকবল আছে সেটা দিয়েই তার সরকার মানুষের যেভাবে সেবা করে যাচ্ছে সেটা যথেষ্ট। আর সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। হ্যাঁ, দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব আছে, বিশেষ করে যারা সীমিত আয়ের তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছে। তবে, গ্রামে যারা নিজেরা উৎপাদন করতে পারেন বা করছেন তাদের জন্য খুব একটা কষ্ট নেই, হাহাকারও নেই। তারপরও আমাদের সবসময় প্রচেষ্টা যে দ্রব্যমুল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তার জন্য যথাযথভাবে যে যে পণ্যের প্রয়োজন সেটা দেশে যেমন উৎপাদনের পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি আমদানীও আমরা করে যাচ্ছি। যেটা যত টাকাই লাগুক না কেন। আমরা কিন্তু খরচ করে যাচ্ছি। ফলে, আমাদের রিজার্ভেও চাপ পড়ছে। মানুষের কল্যাণটা হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় কথা। সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি।

তিনি বলেন, আমরা যে পারিবারিক কার্ড দিয়েছি তার ফলে স্বল্পমূল্যে চালসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয়েরও একটি সুযোগ হয়েছে। আবার যারা আরো দরিদ্র তারা যেন আরো কম মূল্যে চাল কিনতে পারে সে ব্যবস্থাও করেছি। আর একেবারে হতদরিদ্রদের বিনামূল্যে আমরা চাল দিচ্ছি। এভাবেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা যথাযথভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালামের প্রশ্নের জবাবে জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এবং ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য, যেমন- জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বাড়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে সংকট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এ পরিস্থিতেও আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, টাকার বিনিময় হারের সাম্প্রতিক পতন অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য শিগগিরই ক্রলিং পেগ ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। ফলে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।

সড়ক দূর্ঘটনা বন্ধে পদক্ষেপ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে সরকার বলেন, আমাদের ট্রাফিক পুলিশ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে। তাদের রোদ বা ঝড়বৃষ্টি রোদ বলে কিছু নেই। তারা তাদের কর্তব্য পালন করে যান। কিন্তু মানুষের সচেতনতা না এলে কী করবেন? হেলপার যদি গাড়ি চালায় বা যার লাইসেন্স নেই যে কোন গাড়িতে বসে চালাতে শুরু করে এটা তো বুঝাও দুষ্কর। আর এভাবে গাড়ি চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে। এরা নিজেও মরে, যাত্রীদেরকেও মারে।

দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধি পেয়েছে এমনটা জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। আমরাও গাড়ি কেনার সুযোগ দিয়েছি মানুষকে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সুযোগ দিয়েছি। এখন আমাদের গাড়ির সংখ্যা এত বেশি কিন্তু সেই তুলনায় ড্রাইভারের সংখ্যা খুব কম। আমরা চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিচ্ছি। এখন শুধু হাতে কলমেই ট্রেনিং নয়, একেবারে কম্পিউটারাইজড। এটা ডিজিটাল সিস্টেমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যাতে লাইসেন্স দেয়া হয় সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।

সরকার প্রধান বলেন, যাদের লাইসেন্স নেই তারা যেন গাড়ি চালাতে না যান। এটা করতে গেলে তা হবে আত্মঘাতি। এই আত্মঘাতি ব্যবস্থা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সকলে সচেতন ও সোচ্চার হলে এটা অনেকটা কমবে। তারপরও বলবো দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনাই। এটা আমাদের দেশ বলে নয়, সারা বিশ্বে অন্য দেশে যান- কী পরিমাণ মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যায়। এটা খুবই দুঃখজনক।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা সুনির্দিষ্ট করে দুর্ঘটনা মুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। যার জন্য অনেক এলাকায় দুর্ঘটনা হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চালকদের দীর্ঘ সময় যাতে একটানা গাড়ি চালাতে না হয়-এজন্য আমরা বিশ্রাম করার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এজন্য অনেকগুলো বিশ্রামাগার তৈরি করা হচ্ছে। এটা হলে চালকরা কিছু স্বস্তি পাবেন।

চালকদের বিশ্রাম এবং ডিউটিকালিন আহারের বিষয়ে সকলেই আন্তরিক হবেন, বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।