শেখ হাসিনা দেশে ‘ডান্ডাতন্ত্র’ চালু করেছেন: রিজভী
শেখ হাসিনা দেশে ‘ডান্ডাতন্ত্র’ চালু করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘দেশে বর্তমান অবৈধ সরকারের আদিম হিংস্রতা শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা তার রীতি অনুযায়ী বেপরোয়া ডান্ডা-তন্ত্র চালু করেছেন।’
শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভি।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১০টায় পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
বিনা উসকানিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ করে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আজকের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো- আওয়ামী গুন্ডাবাহিনীর রাজত্ব কত ভয়ঙ্কর। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর পুলিশের এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির সভা-সমাবেশের মানুষের ঢল দেখে সরকার দিশেহারা, তাই সরকার লাঠির ভাষায় জবাব দিতে চাচ্ছে। জাতি মাফিয়া রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছে। হঠাৎ করেই সরকারের পতনের খবর পাওয়া যাবে। শেখ হাসিনার চিরকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকার স্বপ্ন পূরণ হবে না। এই সরকার এখন কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র দিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছে।’
রিজভী জানান, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে পুলিশি হামলায় বিএনপির ১১৯ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ আটক করেছে ২১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই সরকারের ভাবমূর্তি এমন তলানিতে ঠেকেছে যে, জনগণের মনোযোগ ভিন্ন দিকে সরাতেই সরকার সিরিজ ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আজকের প্রেস ক্লাব এলাকা ছিল যেন রক্তমাখা রণক্ষেত্র। দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের ওপর পুলিশ যে হামলা করেছে তা কেবলমাত্র কাপুরুষরাই করতে পারে। ডা. জাহিদ অনেক অনুরোধ করার পরেও পুলিশ তাকে রেহাই দেয়নি, উপর্যপুরি তার ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। আজকে পুলিশের আচরণ ছিল উদ্ধত, বেপরোয়া ও সন্ত্রাসী ক্যাডারদের মতো।’
রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা একটি “মাফিয়া জেনারেশন’ তৈরি করতে চান বলেই বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ, ভিন্ন মত ও চিন্তা সহ্য করতে পারেন না। আওয়ামী লীগের হৃদয় কখনোই মুক্ত ও উদার ছিল না। গত ১২টি বছর ধরে দেশ থেকে সভা-সমাবেশের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আজকে প্রেস ক্লাবের ঘটনা ফ্যাসিবাদের অবয়বের চূড়ান্ত রুপ।’
এ সময় তিনি সংঘর্ষে আহত ও আটক হওয়া নেতাকর্মীদের নামের তালিকা পড়ে শোনান।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, সহ-ত্যথবিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, তিতুমীর কলেজের সাবেক ভিপি হানিফ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম নকী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক সরদার নুরুজ্জামান, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সফিকুল ইসলাম, ছাত্রদল উত্তর নেতা সাজ্জাদ হোসেন রুবেলসহ আরও অনেকে।
আটক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- যুবদল কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাকির সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার ভূঁইয়া রুবেল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ নাঈম, সহ-সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন নাঈম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জহির মাঝি, আনোয়ার হোসেন এবং হরেন, স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের এবাদুল ব্যাপারি, নাদিম হোসেন, হিরন, মো. আজিজ, মো. রুবেল, ইরান, সুমন, রাহাদ, সজিব, আলামিন, জয়, মো. রফিক প্রমুখ।
প্রকৌশল নিউজ/এস