খালেদা জিয়াকে নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্য অমার্জিত : ফখরুল
খালেদা জিয়ার করোনা সংক্রমণের পর হাসপাতালে ভর্তি এবং বিদেশে তার চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে চিঠি এসব কিছু নিয়ে বেশ কিছুদিন সরগরম জাতীয় রাজনীতি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্যেও ছাড় দেননি। সেই সব মন্ত্রীদের এবার একহাত নিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে সরকারের কিছু প্রভাবশালী মন্ত্রীর বক্তব্য শুধু অশালীন নয়, অমার্জিত ও অগ্রহণযোগ্য। এভাবে যাচ্ছেতাই কথা বলে সরকার পার পাবে না।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে দলটির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় মন্ত্রীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দয়া করে সংযত হোন, দয়া করে আপনাদের কথা একটু কমান। এভরি থিং ইজ বিং নোটেড অ্যান্ড দা পিপলস অব দিস কান্ট্রি উড বি গিভ এন আনসার টু টাইমলি। সময় যখন আসবে, তখন তারা তার জবাব দেবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব মন্ত্রী, যাঁরা ওইভাবে ক্ষমতায় না আসলে কোনো দিন এমপি হওয়ারও স্বপ্ন দেখতে পারতেন না। ভবিষ্যতে এ ধরনের উক্তি করলে তার যথাযোগ্য জবাব এ দেশের জনগণ আপনাদের দেবে।’
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনারা বলেছেন, অনুমতি দিতে পারছেন না। না পারার যে যুক্তিগুলো দিলেন, সেই যুক্তিগুলো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যুক্তি, খোঁড়া যুক্তি। তাঁরা বলেছেন যে সাজাপ্রাপ্তদের বিদেশে পাঠানোর নজির নেই। এটা তাঁরা ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭৯ সালে আমাদের স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম আবদুর রব জেলে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবের আমলে তাঁকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য জার্মানি পাঠানো হয়েছিল। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম সাহেব। সাজাপ্রাপ্ত মোহাম্মদ নাসিমকে ২০০৮ সালে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সুতরাং কেন এই সমস্ত খোঁড়া যুক্তি? সোজা বলেন যে আমরা দেব না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের সেই বদান্যতা নেই। থাকলে খালেদা জিয়াকে অনেক দিন আগে আপনারা ছেড়ে দিতেন, আপনারা রাজনীতি করতে দিতেন। এত ভয় কেন? নির্বাচন? কারণ আপনারা জানেন যে নির্বাচন হলে আপনারা কোনো দিনই জিততে পারবেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে না দেওয়াটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, অমানবিক। এ ব্যাপারে জনগণকে ভ্রান্ত ধারণা দেওয়া হচ্ছে, বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ করে রাখা, তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া, তাঁর দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াটা সরকারের লক্ষ্য। তিনি বলেন, মূল উদ্দেশ্যটা কী? এ দেশে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে একটি দল আছে, সেটা হচ্ছে বিএনপি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশের অন্তরাত্মা—এই রাজনীতি করে বিএনপি। এই দলের মূল শক্তি জনগণ। তিনি বলেন, বিএনপির ভোটাররা যারা বাংলাদেশি, যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেখতে চায়, শতকরা একশ জন মানুষের যে মূল্যবোধ, ধর্মীয় বোধ, চিন্তাবোধ যারা ধারণ করে, তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিএনপি কাজ করে।
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিসের নৈতিকতার কথা বলেন, আমরা আজ পর্যন্ত বুঝতে পারি না। সত্যিকার কথা বলতে কি, আওয়ামী লীগ এটা বিশ্বাসই করে না। যখনই তারা ক্ষমতায় এসেছে, তখনই তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য যা যা করা দরকার, তা করেছে। ইনফ্যাক্ট তারা বাংলাদেশের সোলটাকে (আত্মা) মেরে ফেলেছে, ধ্বংস করে ফেলেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার পুঁজিবাদীদের স্বার্থে, কিছু লুটপাটকারীর স্বার্থে পুলিশ দিয়ে বাঁশখালীতে শ্রমিকদের হত্যা করেছে। এটা সম্পূর্ণ পুঁজিবাদীর স্বার্থে। গতকাল টঙ্গীতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর গুলি চালাল। কেন? আলোচনা করেন, কথা বলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে বন্দুক বের করে গুলি করলেন? কেউই নিরাপদ নয় আজ।’
লকডাউনের সময় বিএনপির নেতা নিপুণ রায় চৌধুরীসহ দলের নেতা-কর্মী এবং আলেম-উলামাসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ঈদের আগেই নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানান বিএনপির মহাসচিব।