নির্বাচন যত দেরি হবে ততই ষড়যন্ত্র হবে : তারেক রহমান
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘সংস্কার টেকসই’ করতে জনসমর্থনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আজ আমরা সংস্কারের কথা বলছি। অথচ বিএনপি ২ বছর আগে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। একজন এটি শুরু করবে, আর বাকিরা তা চলমান রেখে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।’
‘দেশের অনেক ব্যক্তি বা সংগঠন সংস্কারের কথা বলেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সংস্কারের কথা বলছে’-বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পর্যায়ক্রমে সংস্কার পরিবর্তিত হবে।
তারেক রহমান আজ শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিল উপলক্ষ্যে স্থানীয় টাউন ফুটবল মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
এর আগে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
‘নির্বাচন যত দেরি হবে, ততই ষড়যন্ত্র হবে’ এ কথা উল্লেখ করে, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনই পারে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে। তাছাড়া, সংস্কার টেকসই করতে হলেও জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। আর সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমেই কেবল এটি করা সম্ভব।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র সম্মেলনে প্রদত্ত তারেক রহমানের বক্তব্যে দলের সাংগঠনিক ভিত আরো সুসংগঠিত করার দিক-নির্দেশনামুলক পরামর্শ প্রাধান্য পেয়েছে। দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী, বিশেষ করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে শত অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও যারা মাঠে থেকে বিএনপি’র রাজনীতিকে সমুন্নত করেছেন তাদেরকে মূল্যায়ন করার কথাও তিনি দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করেন। তারেক রহমান ডেলিগেটদের ভোটের মাধমে নেতা নির্বাচন করার পদ্ধতি অনুসরণ করারও নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ‘জুলাই-আগস্টের’ গণআন্দোলনে ‘শহিদ ও আহতদের’ প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন,‘তাদের আন্দোলনের জন্যই আজকের অন্তর্বর্তী সরকার। তাই বিএনপি সহ আন্দোলনকারী সকল দল অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একদিকে যুবলীগ-ছাত্রলীগ, অন্যদিকে পতিত স্বৈরাচারের আমলে রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর অতি-উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্যকে (যারা নিজেদেরকে আওয়ামী লীগের দলীয় পুলিশ ভাবতো) ব্যবহার করে দেশে বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। মহান আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া যে, দেশের মানুষ আজ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশকে যেভাবে আওয়ামী লীগ ব্যবহার করেছে, একটা গণতান্ত্রিক দেশে এটা হতে পারে না। সন্ত্রাস আর দুর্নীতি ছাড়া আওয়ামী লীগের কিছু নেই। এ সময় বিএনপি’র মহাসচিব দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি কখনো আপোষ করবে না’।
জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবুর সভাপতিত্বে এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও নিতাই রায় চৌধুরী, দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অদিত্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাএ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব শরিফুজ্জামান শরীফ এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৪ বছর পর চুয়াডাঙ্গায় জেলা বিএনপির এ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওযায় বিএনপি’র নেতা কর্মিরা উৎসবের আমেজে দলের সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন। সম্মেলন স্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সম্মেলন স্থলে আসা শরু করে। এসব মিছিলে অংশগ্রহনকারীদের কারো হাতে ছিল বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি-সম্বলিত পোস্টার, কারো হাতে ছিল দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছবি-সম্বলিত ফেস্টুন, আবার কারো হতে ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের ছবি ও ধানের শীষ প্রতীক সম্বলিত পোস্টার ও ফেস্টুন।।
দুপুরের মধ্যেই কানায় কানায় ভরে ওঠে ঠাউন হল ফুটবল মাঠ। এসময় বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে এই জেলা শহরের অলিগলি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র এই সম্মেলনে যোগ দেন ৮০৮ জন ডেলিগেট। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন অর্থাৎ ওয়ার্কিং সেশনে ডেলিগেটরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ডেলিগেটদের ভোটের মাধ্যমে জেলা বিএনপি’র নেতা নির্বাচিত হওয়ার কথা রয়েছে।