ছেলেটি মা'কে ফিরে পেলো পুলিশের আন্তরিকতায়
ছেলেটির নাম ইয়াসিন। বয়স মাত্র ৭ বছর। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল পিতৃহারা এই ছেলেটি গত ১৩ এপ্রিল টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আদারকল নামক এলাকার বাসা থেকে সকালে বের হয়ে টঙ্গী রেলস্টেশনে আসে। এরপর সে ট্রেনে চড়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে যায়। তারপর কমলাপুর-সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় কামরাঙ্গীরচর থানার মাদবর বাজার এলাকায় আসে। সেখানকার মুসল্লীরা তারাবির নামাজের পর শিশুটিকে কাঁদতে দেখতে পেয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ ছেলেটিকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করে।
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার ছেলেটির প্রকৃত অভিভাবকের নিকট হস্তান্তরের জন্য লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কে. এন. রায় নিয়তিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা মোতাবেক শিশুটির প্রকৃত অভিভাবকের নিকট হস্তান্তরের জন্য যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বার্তা প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেটির ছবিসহ প্রাপ্তি সংবাদ ব্যাপক প্রচার করা হয়।
অন্যদিকে ছেলেটির মা শামসুন্নাহার (৩৫) তাঁর ছেলেকে না পেয়ে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করে খুঁজতে থাকেন। এমনিতেই তিনি গত বছরের মার্চে স্বামীকে হারিয়েছেন। দুই ছেলেমেয়ে লিমা (১২) ও ইয়াসিনকে(৭) নিয়ে টঙ্গীর দাদা গার্মেন্টসে চাকুরী করে অনেক কষ্টে সংসার চালান। বুকের মানিক পুত্রসন্তানকে আশেপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে স্থানীয় টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন।
হারিয়ে যাওয়া ছেলেটির সাথে নিবিড় কথাবার্তা বলা হয়। সে জানায় এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে গেলে সে তার বাসায় যেতে পারবে। সেজন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে কামরাঙ্গীর চর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর প্রকৃত অভিভাবকের খোঁজে এসআই মিলনের নেতৃত্বে ছেলেটিসহ একটি টীমকে ১৬ এপ্রিল সকালে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনের পাঠায়। এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে পৌঁছানোর পর তারা ছেলেটির কথামতো টঙ্গী রেলস্টেশনের দিকে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে আজমপুর এলাকায় পৌঁছে ছেলেটির প্রদত্ত ঠিকানা স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা করা হয়। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক টঙ্গীর আটারকল পাগাড়পাড় এলাকায় গিয়ে সন্ধ্যার দিকে তার মাকে খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর টঙ্গী পূর্ব থানার সাথে সমন্বয় করে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় ছেলেটির মা শামসুন্নাহারের (৩৫) কাছে তার বুকের মানিককে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস