ভারত ফেরত তরুণীর মামলা : ২ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
ভারত ফেরত তরুণীর মামলা : ২ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
  • Font increase
  • Font Decrease

নারী পাচার মামলায় দু’আসামি বুধবার আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিরা হলেন মেহেদি হাসান বাবুল ও মহিউদ্দিন। ভারতে পাচার হওয়ার ৭৭ দিন পর কৌশলে দেশে ফিরে এসে এক কিশোরী রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে এ মামলা দায়ের করে।

বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। রিমান্ড শেষে বুধবার তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আসামি মেহেদি হাসান বাবুল ও মহিউদ্দিন স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। একইসঙ্গে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপর আসামি আবদুল কাদেরসহ তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

এরআগে গত ৩ জুন আসামিদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদেরকে দশ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ভারতে গণধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী সম্প্রতি দেশে ফিরে গত ১ জুন হাতিরঝিল থানায় এ মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে তিনজনকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মেহেদি হাসান ওই কিশোরীসহ এক হাজারের বেশি নারীকে ভারতে পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। অপর দুই আসামি মহিউদ্দিন ও আবদুল কাদের মামলার বাদি ভুক্তভোগীসহ পাঁচ শতাধিক নারীকে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বাড়িতে আটক রাখতে সহায়তা করে। ভুক্তভোগী নারীদের সীমান্তে মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন তারা।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, পাচারের শিকার কিশোরীর সঙ্গে ২০১৯ সালে হাতিরঝিলে মধুবাগ ব্রীজে টিক টক হৃদয় বাবুর পরিচয় হয়। ‘টিকটক’ স্টার বানানোর আশ্বাস বা কখনো ভালো বেতনের চাকরির অফার দিয়ে কিশোরীদের প্রলুদ্ধ করার চেষ্টা করে হৃদয় বাবু। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের এডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০ থেকে ৮০ জনকে নিয়ে ‘টিকটক হ্যাংআউট’ এবং ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭শ’ থেকে ৮শ’ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করে হৃদয় বাবু।

এবছর ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় বাউল লালন শাহ মাজারে আয়োজিত টিকটিক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এই মানব পাচারকারী চক্রের অন্যান্য সহযোগিদের সহায়তায় কৌশলে ওই কিশোরীকে ভারতে পাচার করে হৃদয় বাবু। পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পরার পর থেকে পালিয়ে দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত এই কিশোরীর ওপর লোমহর্ষক পাশবিক নির্যাতন করা হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

মামলার অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, ভারতে পাচারের পর কিশোরীটিকে ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় রাখা হয়। বাসাগুলোতে হাতিরঝিল এলাকার আরও কয়েকজন তরুণী ও কিশোরীর সঙ্গে দেখা হয় ওই কিশোরীর। এদের মধ্যে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওর নির্যাতিত তরুণীও ছিলেন, যাদের সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস