খননের বছরেরই মরে যাচ্ছে বুড়ি তিস্তা
পঞ্চগড়ের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় প্রবাহিত খরস্রোতা আন্তসীমান্ত নদী বুড়ি তিস্তা। নদীটি শুকিয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়ায় সরকার ২০১৯ সালে খননের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু খননের একবছর পেরুতে না পেরুতেই আবারও মরে যাচ্ছে এই নদী । বর্তমানে এই নদীর বুকে দুলছে বোরো ধানের শীষ। বুড়ি তিস্তা হারিয়ে গেলে এই এলাকায় কৃষিকাজে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে নদীটি খনন করা হয়েছে। খনন করে নদীটির ক্ষতি হয়েছে। সরকারি বরাদ্দের টাকা জলেই ভেসে গেছে। বুড়ি তিস্তার উৎপত্তি ভারতে। এ নদী বাংলাদেশে প্রায় ২৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে। এই নদী গভীর এবং স্রোতস্বিনী ছিলো এক যুগ আগেও। বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে নদীটির অপিরিসীম ভূমিকা ছিলো। পানি সম্পদ এবং দেশি মাছ উৎপাদনে বুড়ি তিস্তার ব্যাপক অবদান থাকলেও আস্তে আস্তে নদীটি সংকীর্ণ হতে থাকে। গভীরতা কমে যায়। অর্ধমৃত নদীতে পরিণত হয়। সরকার নদী খননের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করলে এই নদী খননের প্রস্তাবনা দেয় পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৬৪ জেলায় ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুন:খনন প্রকল্পের ৬ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৯ সালের ১৮ মে এই নদী খনন কার্যের উদ্বোধন করেন। একই বছরের ১৯ নভেম্বর নদীর খনন কাজ শুরু হয়। নদী খনন শুরু হলে স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। কিন্তু একবছরের মধ্যে নদীটি মরে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় হতাশা নেমে এসেছে।
নদীটির প্রশস্ততা একশ থেকে দেড়শ ফিট হলেও খনন করা হয় মাত্র ২০ মিটার। মাত্র ৬ ফিট গভীর করে খনন করা হয়। খননের পর নদীটির উভয় পাড় সুরক্ষিত এবং লোক চলাচলের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও এসব কিছুই করা হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীটি আবার বালি মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে যায়। অথচ খননের আগে অল্প প্রশস্ততা নিয়ে নদীটি প্রবাহমান ছিলো।
বর্তমানে শুকিয়ে পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। সারা নদীতেই স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধানের আবাদ করছেন। বিলুপ্ত হয়ে গেছে দেশী মাছের বিচরণ। অন্য পেশায় কাজ করার চেষ্টা করছেন স্থানীয় মৎসজীবীরা।
বড়শশি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক সরকার জানান, বুড়ি তিস্তার পাড়েই আমার বাড়ি। আমার পরিবারের প্রায় ১২ বিঘা জমি এই নদীতে বিলীন হয়েছে। তাতে দুঃখ নেই। খননের আগে নদীটি শীর্ণভাবে হলেও প্রবাহমান ছিলো। কিন্তু খনন করার ফলে নদীটি মরে গেছে। এই এলাকার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কারিগরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ জানান, অচিরেই নদীটি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে। খননের আগে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিলো । এখনো সময় আছে । নদীটির প্রাণ স্পন্দন ফেরাতে হলে দ্রুত নতুন করে খনন করতে হবে।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ্দৌলা বলেন, বুড়ি তিস্তা খননে পরিকল্পনার কোন ভূল ছিল না। পঞ্চগড়ের মাটির চরিত্র আলাদা। খনন করলেও বর্ষার স্রোতে মাটি গলে যায়। ফলে নদী খুব তাড়াতাড়ি ভরাট হয়ে যায়। তবে বেশ কয়েকবার খনন করলে দুই পাড় ঠিক হয়ে যাবে। পরে দীর্ঘস্থায়ীভাবে আর ভরাট হবে না।
প্রকৌশল নিউজ/প্রতিনিধি