আফগানিস্তানের গণমাধ্যমকর্মীদের সরিয়ে নিতে জি-৭ এর প্রতি আহ্বান


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
আফগানিস্তানের গণমাধ্যমকর্মীদের সরিয়ে নিতে জি-৭ এর প্রতি আহ্বান
  • Font increase
  • Font Decrease

আর্টিকেল নাইনটিনসহ ৫৩টি আন্তর্জাতিক নাগরিক অধিকার ও সাংবাদিক সংগঠন আফগানিস্তানে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা প্রদান ও তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য জি-৭ (গ্রুপ অব সেভেন- জি-৭) এর সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো জি-৭ এর সদস্য। শিল্পোন্নত এই দেশগুলোর জোট আফগানিস্তানের অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে একটি অনলাইন শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই শীর্ষ সম্মেলনকে উদ্দেশ করে আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক স্তরে কাজ করে এমন অধিকার সংগঠনগুলি একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে তারা জি-৭ জোটের দেশগুলোকে আফগানিস্তানের সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে জরুরি এবং আশু অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য স্পষ্ট ও সুপরিকল্পিত প্রতিশ্রুতি দিতে বলেছে। একই সঙ্গে এই সকল ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা প্রদান ও দেশটি থেকে তাদের সরিয়ে নিতে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল এই বিষয়ে এক পৃথক বিবৃতিতে বলেছেন, “চরম আতঙ্কের মধ্যে বাস করা লাখ লাখ আফগান নাগরিকদের সাথে আর্টিকেল নাইনটিন একাত্মতা প্রকাশ করছে। আমরা সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী এবং নারী অধিকার কর্মী, লেখক, শিল্পী এবং শিক্ষাবিদদের সহায়তায় অংশীদারদের সাথে কাজ করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিদ্ধ। এই ব্যক্তিগোষ্ঠীর সবাই তালেবানদের সহিংসতার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন এবং গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, "আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের এবং মিডিয়া কর্মীদের জন্য জি-৭ সদস্যদের বর্তমান সহায়তা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে পরিবারসহ দেশটি থেকে বেরিয়ে আসা যাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তাদের প্রতি এবং নারীদের সুরক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। জি-৭ সরকারগুলোকে এই মানুষজন এবং তাদের পরিবারের জন্য আশ্রয় চাওয়ার জন্য ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করার পাশাপাশি ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া সহজ এবং নিরাপদ করতে হবে। এমনকি সম্ভব হলে এই ইস্যুতে তৃতীয় দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে।’’

আর্টিকেল নাইনটিনসহ ৫৩ আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠনের বিবৃতিতে জি-৭ দেশগুলোর প্রতি যে সব আহ্বান জানানো হয়েছে:

ঝুঁকিতে থাকা সকল সাংবাদিক, মিডিয়া কর্মী এবং মিডিয়া অ্যাডভোকেটদের এবং তাদের পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার জন্য একটি স্পষ্ট ও সুপরিকল্পিত প্রতিশ্রুতি দিন;

সকল আফগান সাংবাদিক, মিডিয়া কর্মী, মিডিয়া অ্যাডভোকেট এবং আশ্রয়প্রার্থী তাদের পরিবারের জন্য ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ সহজ করুন;

ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়াটি সহজ এবং সুরক্ষিত করুন এবং সম্ভব হলে তৃতীয় দেশগুলির সাথে সহযোগিতা করুন;

বিমানবন্দর এবং অন্যান্য রুটে নিরাপদ প্রবেশের ব্যবস্থা করুন;

বিমানবন্দরের সুরক্ষার জন্য কাবুলে থাকুন যাতে ৩১ আগস্টের সময়সীমার পরেও লোকজনদের সরিয়ে নেয়া যায়।

আফগান সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীদের জন্য একটি জরুরি তহবিল গঠন করুন;

নগদ অর্থ যাতে দেশটিতে ঢুকতে পারে সেজন্য সহায়ক পথ সৃষ্টি করুন; 

জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দসমূহ পুনারায় পরিকল্পনা করুন;

তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘ গৃহীত কর্মসূচির সাথে সমন্বয় সাধন করুন;

২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে পর্যাপ্ত কর্মী এবং রসদসহ একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান;

উল্লেখ্য, তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ইতিমধ্যে ৫০টিরও বেশি পত্রিকা, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তালেবানের হাতে নিহত বিশিষ্ট নারীসহ সাংবাদিকদের সংখ্যা মে মাস থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মাসে তারা কাবুলে আফগানিস্তানের সরকারি মিডিয়া সেন্টারের পরিচালককে হত্যা করেছে। সরাসরি গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করার এমন পদক্ষেপ নিয়েই তালেবানরা ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং ভয় দেখিয়ে আফগানিস্তানজুড়ে এক চরম অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম আগেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাকিরা তাদের জীবন রক্ষার জন্য তালেবান-অনুমোদিত বিবৃতি এবং তালেবানি ভাষ্য প্রচার করতে বাধ্য হচ্ছে।

তালেবানের নারীবিদ্বেষী শাসনের কারনে নারী সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম কর্মীরা সহিংসতা ও প্রতিশোধের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে নারী কর্মজীবীদের বাড়ি ছেড়ে পালানোর এবং আত্মগোপনে থাকা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। একইভাবে সীমিত সুযোগের মধ্যেও বিশিষ্ট ও সুপরিচিত নারী অধিকার কর্মী এবং সুশীল সমাজের অন্য সহযোগীরা দেশটি থেকে নিরাপদে বের হতে হিমশিম খাচ্ছেন। এদের অনেকেই গত ২০ বছরে মার্কিন-আন্তর্জাতিক উন্নয়ন উদ্যোগের সমর্থন-সহায়তায় নিজেদের মেধা ও দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে জনপরিচিতি লাভ করেছিলেন। সাধারণ আফগান নাগরিকদের মতো তাদের ভাগ্যও এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আর্টিকেল নাইনটিন মনে করে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই আফগানিস্তানে সকল পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠনের জন্য আলোচনার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য তালেবানকে তার দায়িত্বের প্রতি দায়বদ্ধ রাখতে হবে।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস