খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের বিশ্বয়কর সাফল্য : শেখ হাসিনা
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজ বিশ্বে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি অর্জনে ছয়টি থিমেটিক এরিয়াতে কাজ করে যাচ্ছি (১) কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন, (২) কৃষি উপকরণ সরবরাহ, (৩) কৃষি সম্প্রসারণ, (৪) সেচ কাজে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার, (৫) জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত প্রভাব মোকাবিলা এবং (৬) প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন।
রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২৪ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়ন প্রান্তে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃষিমন্ত্রী তিনটি ক্যাটাগরিতে ৩২ জন পুরষ্কার বিজয়ীর হাতে পদক ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর উপর ‘বাণী চিরসবুজ’ ও স্মারক গ্রন্থ ‘চিরঞ্জীব’ শীর্ষক দুইটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সবাইকে অনুরোধ করবো, সাবধানে থাকবেন। প্রধান নিজেকে নিরাপদ রাখবেন। পরিবারকে নিরাপদে রাখবেন। আমরা এই অবস্থাও মোকাবিলা করতে পারব। আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমরা চাই।
তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো- করোনা আসার পর শুধু বাংলাদেশ না, সারাবিশ্বে একটা স্থবিরতা এসে গেছে। যেটা সব থেকে দুঃখজনক। আর আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জন্য সব থেকে কষ্টকর।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষ যেন কষ্ট না পায়, তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা ৭২৭ স্থানে ওএমএস কার্যক্রম চালু করেছি। সেখানে চাল, আটাসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করা হয়। টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরাসরি বিক্রি অব্যাহত আছে।
দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সুদীর্ঘ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটা বদ্বীপ। এই বদ্বীপে বসবাস করা মানুষ যেন ভবিষ্যত প্রজন্মসহ নিরাপদ থাকে, সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই ২১০০ সাল পর্যন্ত বদ্বীপ প্রকল্প নিয়েছি। যার মাধ্যমে এই দেশের উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে, উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে। সেই পরিকল্পনা নিয়ে সেটাও আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০০৮ সালে নির্বাচনি ইশতেহারে দিয়েছিলাম ‘দিন বদলের সনদ’। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ তার অগ্রযাত্রা শুরু করবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি।
করোনাকালীন সময় প্রায় ২৩টি প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমগ্র দেশের মানুষকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছি। প্রায় ৫ কোটির ওপর মানুষ আমাদের সহায়তা পেয়েছেন। পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অবস্থাও আমরা মোকাবিলা করতে পারব ইনশাআল্লাহ। এই বিশ্বাস আমাদের আছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমরা চাই।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট আইন-২০১৬, বীজ আইন-২০১৮, বালাইনাশক আইন-২০১৮, সার ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০১৮ ও উদ্ভিদজাত ও কৃষক অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০১৯-সহ মোট ১৫টি আইন এবং সহায়ক নানা নীতি/বিধিমালা প্রণয়ন, ‘কৃষি বাতায়ন’, ‘কৃষি কমিউনিটি রেডিও’ চালু, রেয়াতি শুল্কহারে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির সুবিধা সম্প্রসারণ, কৃষিযন্ত্রের ক্রয়মূল্যের উপর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদান, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলের উপর ২০ শতাংশ রেয়াত সুবিধা প্রদানসহ কৃষি সম্প্রসারণে নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
চলতি অর্থবছরে সার-বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহায়তা বাবদ ২ কোটি ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৯ জন কৃষককে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৪১৩.৪৬ কোটি টাকার প্রণোদনা সরাসরি প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ, সমবায় উদ্বুদ্ধকরণ, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, মহিলাদের অবদান, বাণিজ্যিকখামার, বনায়ন, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন এবং মাছ চাষ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ৩২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার দেওয়া হয়।