বিধিনিষেধ মানাতে কঠোর অবস্থানে সরকার
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী ‘কঠোর বিধিনিষেধের’ প্রথম দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে মোড়ে পোস্ট বসিয়ে তারা লোক চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তবে সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িও দেখা গেছে।
এছাড়া বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে থাকবেন ১০৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে থাকবেন।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী এই বিধিনিষেধে জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে কেউ বের হলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে সরকার।
এদিকে এবারের বিধিনিষেধে সরকারের পক্ষ থেকে 'কঠোর' হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলেই গ্রেপ্তার করার কথা বলেছে পুলিশ। বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করতে মাঠে থাকছে সেনাবাহিনীও।
সকালে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের চিত্র দেখা যায়। মোড়ে মোড়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে; চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কাউকে থাকতে দিচ্ছে না তারা।
সড়কে থামিয়ে কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন- এমন সব প্রশ্নের পর যৌক্তিক জবাব দিতে পারলেই সাধারণ মানুষকে গন্তব্যে যেতে দেওয়া হচ্ছে। না হয় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে সবাইকে। রাস্তায় গণপরিবহন চলছে না। চলছে ব্যক্তিগত, অফিসের গাড়ি। রিকশা চালু আছে। অনেকেই গন্তব্যে যাচ্ছেন পায়ে হেঁটে।
এর আগে গত রবিবার বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েও সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সমন্বয়হীনতায় তা পিছিয়ে যায়। এই সময়ে ঢাকা থেকে গ্রামে এবং গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করেছে। বুধবার শেষ দিনেও মানুষের এ চলাচল অব্যাহত ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা গেছে।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিধিনিষেধের কঠোর প্রয়োগ চান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, যে 'কঠোর' লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে, সেটি যেন কঠোরই হয়। জীবন রক্ষার স্বার্থেই এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি যাতে পরিকল্পনা মাফিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে করা হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে দরিদ্র, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। অন্যথায় ভোগান্তি বাড়বে, কিন্তু কাজের কাজ হবে না।
এর আগে গত ২৪ জুন কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে সারাদেশে ১৪ দিনের 'শাটডাউনের' সুপারিশ করা হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে কমিটি। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে সব প্রস্তুতি থাকার পরও স্বাস্থ্যব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে বলেও সতর্ক করা হয় কমিটির পক্ষ থেকে।
এরপর ২৫ জুন রাতে প্রেসনোট জারি করে ২৭ জুন থেকে সারাদেশে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরদিন রাতে বৈঠকে তা পিছিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে করার সিদ্ধান্ত আসে। যদিও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অর্থবছরের শেষ সময়ে অর্থ ছাড় করাসহ বিভিন্ন বিষয় থাকে। এ কারণে ২৭ জুন থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে সমস্যা হতো। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।