মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশসহ সকল জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সোচ্চার হতে হবে : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশসহ সকল জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে।
আগামীকাল ২১ ফেব্রুয়ারি ‘মহান শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২’ উপলক্ষে আজ এক বাণীতে তিনি একথা বলেন। খবর তথ্য বিবরণীর।
২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহীদ রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন তিনি।
তিনি বলেন, মহান ভাষা আন্দোলন বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে; যিনি ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেন। স্মরণ করেন তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা সংগ্রামীকে, যাদের দূরদৃষ্টি, অসীম ত্যাগ, সাহসিকতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। বাঙালি পায় মাতৃভাষার অধিকার।
তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন ছিল আমাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষারও আন্দোলন। আমাদের স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অমর একুশের অবিনাশী চেতনাই যুগিয়েছে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস। ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে আসে বাঙালির চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৯৯ সালে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির প্রাথমিক উদ্যোগ এবং সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ ও ঐকান্তিক চেষ্টায় জাতিসংঘ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এটি জাতি হিসেবে বাঙালির একটি অন্যতম গৌরবময় অর্জন। তিনি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২’ উপলক্ষে বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগণ ও জাতিগোষ্ঠীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মাতৃভাষা এবং নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে এ দিবসটি উদযাপন একটি অনন্য উদ্যোগ।
তিনি বলেন, কালের আবর্তে পৃথিবীতে অনেক ভাষাই আজ বিপন্ন। একটা ভাষার বিলুপ্তি মানে একটা সংস্কৃতির বিলোপ, জাতিসত্তার বিলোপ, সভ্যতার অপমৃত্যু। তাই মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশসহ সকল জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে। বিশ্বের বিকাশমান ও বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় গবেষণার জন্য ২০০১ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। এর মধ্যে অনেকগুলো ভাষার সুনির্দিষ্ট লিখিত রূপ নেই। এসকল ভাষার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। একই সাথে যে বাংলা ভাষার জন্য জাতির সন্তানরা জীবন দিয়েছে তার উন্নয়নে সর্বস্তরে শুদ্ধ বাংলা প্রচলনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে আজ আমরা গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা। তাই উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে বর্তমান প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত বিভিন্ন ভাষার ওপর প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। নিজ ভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপন ইতিবাচক অবদান রাখবে।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী মানুষের সাথে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হোক, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জ্বীবিত হোক, গড়ে উঠুক নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব; মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ কামনা করি।’ সুত্র-বাসস।