অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা: কর্মসংস্থান হবে এক কোটি ১৭ লাখ মানুষের
দেশে এক কোটি ১৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির বিশাল লক্ষ্যমাত্রা রেখে অষ্টম (২০২১-২০২৫) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে, ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার শেরে বাংলানগরের এনইসি সভায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন থেকে সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা বিভাগের সদস্য জ্যেষ্ঠ সচিব আসাদুল ইসলাম ও পরিকল্পনা কশিমনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
তারা জানান, ১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে নিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে অষ্টম (২০২১-২০২৫) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার। এর মধ্যে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রবাসে। বাকি ৮১ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে দেশে।
কোন সালে কত কর্মসংস্থান তৈরি হবে তার একটা ধারণাও দেয়া হয়েছে। যেমন, ২০২১ সালে ২১ লাখ ৬০ হাজার, ২০২২ সালে ২২ লাখ ৩০ হাজার, ২৩ সালে ২৩ লাখ ৩০, ২৪ সালে ২৪ লাখ ২০ এবং ২০২৫ সালে ২৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
সভায় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পিছিয়ে পড়া জেলাগুলো থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরির লক্ষে সঠিক তথ্য, প্রশিক্ষণ, অভিবাসন ব্যয় মেটাতে ঋণ সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ধাক্কায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ওই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।
কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ঠ মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারে স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস, কর্মসংস্থান, আয় এবং অর্থনীতি কার্যক্রম পূর্বের ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দ্রুত দারিদ্র হ্রাসকরণে জোর দেয়া হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ এবং তা থেকে উপকৃত হওয়া এবং দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক কৌশল নেয়া হয়েছে। ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়া হবে নতুন পরিকল্পনায়।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে দারিদ্র সমস্যা মোকাবেলায় কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিকে উচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া এবং সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এসব জেলাগুলোতে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং আয় বৃদ্ধির জন্য কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী ৫ বছরে নতুন ১ কোটি ১৬ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কর্মসংস্থানের এই লক্ষ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তুলনায় ১০ লাখ কম। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অনেক লক্ষই পূরণ হয়নি। যেটা অষ্টম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্যে স্থান পেয়েছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। এই ধারাবাহিকতায় ২০২১ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২০, ২০২২ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২২, ২০২৩ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২৯, ২০২৪ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৩২, ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ ধরা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নেমে আসবে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে।
এছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২৫ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশে নিয়ে আসা হবে। আর ২৫ অর্থবছরে চরম দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কিছু অর্থনৈতিক সূচকের প্রক্ষেপণ:
ক. বছরে গড় জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ হারে ও মেয়াদান্তে হবে ৮.৫১ শতাংশ।
খ. মেয়াদান্তে দারিদ্র্যের হার ১৫.৬ শতাংশে ও অতি দারিদ্র্যের হার ৭.৪ শতাংশে দাঁড়াবে।
গ. কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ১১.৩৩ মিলিয়ন, যার মধ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান হবে ৩.২৫ মিলিয়ন এবং শ্রমবাজারে যুক্ত হবে ৭.৮১ মিলিয়ন শ্রমশক্তি।
ঘ. কর-জিডিপি’র অনুপাত ১২.৩ শতাংশ।
ঙ. মেয়াদান্তে প্রত্যাশিত গড় আয়ু হবে ৭৪ বছর।
চ. ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় আনা এবং মেয়াদান্তে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।