টি-টোয়েন্টি সিরিজও কিইউদের


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
টি-টোয়েন্টি সিরিজও কিইউদের
  • Font increase
  • Font Decrease

ওয়ানডে সিরিজটা হাতছাড়া হয়েছে আগেই। এবার হাতছাড়া হলো টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এ নিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টানা ৩১ ম্যাচ পরাজয় বরণ করার লজ্জার রেকর্ড অক্ষুন্ন রাখলো টাইগার বাহিনী।

ওয়ানডের পর নিউজিল্যান্ডের কাছে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজও হারলো সফরকারী বাংলাদেশ। আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে হেরেছে মাহমুদুুল্লাহ রিয়াদের দল। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই টি-টুয়েন্টি সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের। সিরিজ জয় নিশ্চিতের পাশাপশি ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। প্রথম টি-টুয়েন্টি ৬৬ রানে জিতেছিলো নিউজিল্যান্ড।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ও প্রথম টি-টুয়েন্টিতে টস জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টিতে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে বাংলাদেশ। দলকে ভালো শুরুর পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও ফিন অ্যালেন। প্রথম ২৩ বলে ৩৬ রান যোগ করেন তারা। তবে চতুর্থ ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ১০ বলে ১৭ রান করা এ্যালেনকে আউট করেন তাসকিন।

এরপর পাওয়ার প্লের পরের ১১ বলে ১৯ রান যোগ করেন গাপটিল ও ডেভন কনওয়ে। পাওয়ার প্লের শেষ বলে গাপটিলকে বিদায় দেন ফিল্ডার তাসকিন। শর্ট ফাইন লেগে বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন তাসকিন। বোলার ছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ১৮ বলে ২১ রান করেন গাপটিল।

গাপটিলের বিদায়ের পরের বলে, অর্থাৎ সপ্তম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে কনওয়ের উইকেট তুলে নেন বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। ৯ বলে ১৫ রান করেন আগের ম্যাচের হিরো কনওয়ে। এতে ৫৫ রানে ৩ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।


চতুর্থ উইকেটে ৩৩ বলে ৩৯ রান যোগ করে দলকে শতরানের কাছাকাছি নিয়ে যান উইল ইয়ং ও গ্লেন ফিলিপস। বাংলাদেশের স্পিনার মাহেদি হাসানকে উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন ফিলিপস। করেন ১৪ রান। এরপর মার্ক চাপম্যানকে ৭ রানের বেশি করতে দেননি মাহেদি। এতে ১১১ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।

এ অবস্থায় ষষ্ঠ উইকেটে জুটি বাঁধেন ফিলিপস ও ড্যারিল মিচেল। বাংলাদেশ বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলে দলের বড় স্কোরের পথ সহজ করে ফেলেন তারা। ১৭ দশমিক ৫ ওভারের পর বৃষ্টির কারনে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। তখন নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিলো ৫ উইকেটে ১৭৩ রান। বৃষ্টির কারনে ৪৪ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। এতে বৃষ্টি আইনে ১৬ ওভারে ১৭১ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ।

ষষ্ঠ উইকেটে ২৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬২ রান করেন ফিলিপস ও মিচেল। ২৪তম ম্যাচে টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ফিলিপস। ৩১ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৫৮ রান করেন তিনি। আর ১৬ বলে ৬টি চারে অপরাজিত ৩৪ রান করেন মিচেল। বাংলাদেশের মাহেদি ৪৫ রানে ২টি, সাইফউদ্দিন-তাসকিন ও শরিফুল ১টি করে উইকেট নেন।
বৃষ্টি আইনে পাওয়া ১৭১ রানের টার্গেটে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ওপেনার লিটন দাস। ৬ রান করেন তিনি।

লিটনকে হারানোয় ক্রিজে আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাইমের সঙ্গী হন সৌম্য সরকার। পাওয়া প্লের শেষ ওভারে ১৯ রান পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের স্পিনার ইশ সোধিকে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন সৌম্য। এতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় সৌম্যর।

পরের ওভারে পেসার এডাম মিলনেকে আরও দু’টি ছক্কা মারেন সৌম্য। আর ঐ ওভার থেকে ২০ রান পায় বাংলাদেশ। তাই ৭ ওভার শেষে ৭৬ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশের স্কোর। মারুমুখী মেজাজটা অব্যাহত রাখা স্যেম্য বাউন্ডারির সহায়তায় ২৫ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন । ৫২ ম্যাচের টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তার।

তবে হাফ-সেঞ্চুরি পাবার পরের ওভারেই আউট হন সৌম্য। তৃতীয় স্পেলে আক্রমনে এসেই বিধ্বংসী সৌম্যকে থামান নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ও পেসার টিম সাউদি। ২৭ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫১ রান করেন সৌম্য। নাইমের সাথে ৫২ বলে ৮১ রান যোগ করেন তিনি।

দলীয় ৯৪ রানে সৌম্যর আউটের পর মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ২৪ বল ও ৩২ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। নাইম ৩৫ বলে ৩৮, অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১২ বলে ২১, আফিফ হোসেন ২ ও মোহাম্মদ মিঠুন ১ রান করেন। তাদের বিদায়ে এক পর্যায়ে ১৪ দশমিক ১ ওভারে ৬ উইকেটে ১২৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ম্যাচ জিততে শেষ ১১ বলে ৪৫ রানের প্রয়োজন পড়ে টাইগারদের।

নিউজিল্যান্ড বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং বাংলাদেশের এত বড় প্রয়োজনটা মেটাতে পারেননি মাহেদি ও সাইফউদ্দিন। সাইফউদ্দিন ৩ রানে আউট হলেও, মাহেদি ১২ ও তাসকিন শুন্য রানে অপরাজিত থাকেন। নিউজিল্যান্ডের সাউদি-ব্যানেট-মিলনে ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন ফিলিপস।

আগামী ১ এপ্রিল অকল্যান্ডে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টুয়েন্টি।

স্কোর কার্ড (টস-বাংলাদেশ) :
নিউজিল্যান্ড ইনিংস :
মার্টিন গাপটিল ক তাসকিন ব সাইফউদ্দিন ২১
ফিন অ্যালেন ক নাইম ব তাসকিন ১৭
ডেভন কনওয়ে ক মিঠুন ব শরিফুল ১৫
উইল ইয়ং স্টাম্প লিটন ব মাহেদি ১৪
গ্লেন ফিলিপস অপরাজিত ৫৮
মার্ক চাপম্যান ক এন্ড ব মাহেদি ৭
ড্যারিল মিচেল অপরাজিত ৩৪
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-২, নো-২, ও-২) ৭
মোট (১৭.৫ ওভার, ৫ উইকেট) ১৭৩
উইকেট পতন : ১/৩৬ (অ্যালেন), ২/৫৫ (গাপটিল), ৩/৫৫ (কনওয়ে), ৪/৯৪ (ইয়ং), ৫/১১১ (চাপম্যান)।
বাংলাদেশ বোলিং :
নাসুম আহমেদ : ৪-০-২৫-০,
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন : ৩-০-৩৫-১ (ও-১),
তাসকিন আহমেদ : ৩.৫-০-৪৯-১,
শরিফুল ইসলাম : ৩-০-১৬-১,
মাহেদি হাসান : ৪-০-৪৫-২ (ও-১, নো-২)।
বাংলাদেশ ইনিংস (টার্গেট- ১৬ ওভারে ১৭১ রান) :
মোহাম্মদ নাইম ক গাপটিল ব ফিলিপস ৩৮
লিটন দাস ক ফিলিপস ব ব্যানেট ৬
সৌম্য সরকার ক মিলনে ব সাউদি ৫১
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বোল্ড ব মিলনে ২১
আফিফ হোসেন বোল্ড ব মিলনে ২
মোহাম্মদ মিঠুন ক কনওয়ে ব সাউদি ১
মাহেদি হাসান অপরাজিত ১২
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ক সাউদি ব ব্যানেট ৩
তাসকিন আহমেদ অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-১, নো-১, ও-৫) ৮
মোট (১৬ ওভার, ৭ উইকেট) ১৪২
উইকেট পতন : ১/১৩ (লিটন), ২/৯৪ (সৌম্য), ৩/১১০ (নাইম), ৪/১২৩ (মাহমুদুল্লাহ), ৫/১২৪ (আফিফ), ৬/১২৬ (মিঠুন), ৭/১৩৭ (সাইফউদ্দিন)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
টিম সাউদি : ৪-০-২১-২,
হ্যামিশ ব্যানেট : ৩-০-৩১-২ (ও-৩),
এডাম মিলনে : ৩-০-৩৪-২ (ও-১, নো-১),
ইশ সোধি : ৩-০-৩৪-০ (ও-১),
গ্লেন ফিলিপস : ৩-০-২০-১।
ফল : নিউজিল্যান্ড বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : গ্লেন ফিলিপস (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড।

প্রকৌশল নিউজ/এমএস