খুলনায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় নানাবিধি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও খুলনা বিভাগ তথা খুলনাতে সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া খুলনা বিভাগে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। প্রতিদিনই বাড়ছে অদৃশ্য এই ভাইরাসে শনাক্ত এবং আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা।
বুধবার (০৯ জুন) সকাল পর্যন্ত খুলনা বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫৫৭ জনের। যা করোনাসংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভাগে সর্বোচ্চ শনাক্ত। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫৭ জন।
বুধবার দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা জেলার ৩ জন, বাগেরহাটের ৪ জন, কুষ্টিয়ার ২ জন এবং যশোরের একজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এদিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। এখানে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, বুধবার সকাল পর্যন্ত খুলনা করোনা হাসপাতালে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৬ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ভর্তি আছে ১৩০ জন রোগী। যার মধ্যে ৬২ জন আছেন রেড জোনে, ২৯ জন ইয়োলো জোনে। এছাড়া আইসিইউতে ১৮ জন এবং এইচডিইউতে আছেন ২১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫৭ জন রোগী। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫১ জন।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, খুলনা জেলা ও মহানগরীতে নতুন করে ৮০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ৩৩১ জনের নমুনা পরীক্ষায় এ শনাক্ত হয়। খুলনায় মোট নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হার ২৪ শতাংশ।
এদিকে খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বুধবার (০৯ জুন ) সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৩৭ হাজার ৫১২ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯০-এ। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩২ হাজার ৪১৯ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা য়ায়, বিভাগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে খুলনা জেলা শীর্ষে রয়েছে। এ পর্যন্ত খুলনায় শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৯৭৯ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৪৮৪ জন।
এ ছাড়া বাগেরহাটে করোনায় শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯১৮ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪৬২ জন। সাতক্ষীরায় শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১০৯ জন এবং মারা গেছেন ৪৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৫০০ জন।
যশোরে করোনায় শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ৬৯৯ জন, মারা গেছেন ৮৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৬৬০ জন। নড়াইলে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৫৬ জন, মারা গেছেন ২৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৪৪ জন। মাগুরায় করোনায় শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৯২ জন, মারা গেছেন ২৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ২১৫ জন।
ঝিনাইদহে শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ১০ জন, মারা গেছেন ৫৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৮৩ জন। কুষ্টিয়ায় করোনায় শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৩২১ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১২২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৭৫২ জন।
চুয়াডাঙ্গায় শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১১৭ জন, মারা গেছেন ৬৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৪৩ জন। শনাক্তের দিক দিয়ে সর্বনিম্নে রয়েছে মেহেরপুর। এখানে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১০১ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৮৭৬ জন।