মাতাল ‘বিথীকা’ ফুলও গন্ধহীন

মাতাল ‘বিথীকা’ ফুলও গন্ধহীন

শিউলি ফুলের একটা মালা এবারের দূর্গাপূজায় দিয়েছিলাম রমনা কালী মন্দিরের সামনে থেকে। ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ফিরে যখন গাড়ি রেখে রিক্সা করে এগিয়ে দিচ্ছিলাম তখন তিনি শিউলি ফুলের মালাটি রাস্তায় ফেলে দিতে চাইলেন। সেদিন একটা আলতু করে চুমুও দিয়েছি। আমি সেই মালা পকেটে করে এনে এখনো যতনেই রেখে দিয়েছি। বিথীকা ফুল নামের কোনো ফুল আছে কিনা তাও আমার জানা নেই। মানুষের মনটা তো ফুলের মতোই, আমি নিজেকে দিয়ে এটা বিশ্বাস করি। তাই মন থেকে দেয়া এই ফুলের নাম বীথিকা ফুল।

আমি মাত্র দেখলাম আপনার ইমেইলটা। যেহেতু আপনাকে ফোনেই ব্লক করেছিলাম, একটা বাদে। এই নম্বরটা আপনার ৪ নম্বর। যে মানুষের ৪ টা ফোন নম্বর একটিভ থাকে, তাকে নিয়েও আমি কোনো সন্দেহ করতে আসি নাই। এনিওয়ে দুঃখিত। আমি যেহেতু আপনাকে আসতেই বলি নাই, তাই আপনাকে তিন ঘন্টা একটা বেসরকারি টেলিভিশনের পাশে থ্রিষ্টার হোটেলের সামনে তিন ঘন্টা ওয়েট করা উচিত হয়নি। অবশ্য এখন নাকি প্রায়ই আপনি অফিস শেষ করে রাত ১১ টার আগে বাসায়ই যান না। যদিও আপনার অফিস শেষ সন্ধ্যা ৬ টায়। এরপর হয়তো আমাকে না জানিয়েই আপনার শত শত বন্ধু ভাই বোনদের সাথে সময় কাটাতে হয়।
আমি যে হোটেলে আড্ডা মারি, সেই হোটেলে আমার রুম নম্বর কত সেটা আপনি ভালো করেই জানেন বা রেস্টুরেন্টে এসে কাউকে বলতেই পারতেন। যাই হোক আমাদের দেখা না হওয়াটাই ভালো হয়েছে। কারণ আমি যতদূর আপনার সম্পর্কে জেনেছি, তাতে আর কোনোরূপ যোগাযোগ রাখতে আগ্রহ নেই। সেটা ওই রাতেই হারিয়েছে যে রাতে অন্যের বাসায় গিয়ে মাতাল হয়ে জ্বরের মিথ্যা কথা বলে যা তা বলেছেন, সে রাতেই। কখনো বাইরে থাকেন না, সে রাতে আমার চেয়েও মাতাল ছিলেন আপনি। আসলে এ্যালকোহল মানুষকে মাতাল করতে পারে না, মাতাল করে তার মন। এ্যালকোহল যদি সেটা পারতো, তাহলে প্রতি রাতেই আমিই বড় মাতাল হতাম। আপনি আমাকে টাকা এবং ক্ষমতার জন্য অহংকারী বলেছেন। এই কথা অন্য কেউ কোনোদিন বলেননি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি। প্রতিটি মানুষেরই টাকা এবং ক্ষমতায় লোভ থাকে। তাদের মধ্যে আমার বোধহয় টাকার প্রতি লোভ অনেক কম, না হলে এতদিনে কম করে হলে ১০ কোটি টাকার বেশি থাকতো। আমার একটা ব্যাংক একাউন্ট আছে সেটিতে টাকা আছে ৭ শতাধিক টাকা। আর আপনি যেটাকে আমার ক্ষমতার কথা বলছেন, সেটা মূলত আমার কানেকটিভি। সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করাটা, ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ আদায় করাটা ক্ষমতা নয়। এই যে ধরুন, ১১ মাস ব্যবহার করার পর আপনার একটা মোবাইল ফোনসেট ঠিক করাতে গিয়ে নানা হয়রানির শিকার হলেন। তারপর সাথে সাথে ছোট ভাইদের পাঠালাম। এরপর নিজের অসুস্থ শরীর নিয়ে একবার যা বলেছিলাম, তাই হয়েছে। আপনি ১১ মাস ব্যবহার করার পর মোবাইল ফোন সেটের ক্ষতিপূরণ ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। মোবাইলটির দাম ছিল ২৩ হাজার ২০০ টাকা। আমার কথায় আপনি দোকানিকে প্রায় ৪০০০ টাকা ছাড় দিয়েছেন। এটাকে যদি ক্ষমতা বলেন, সেটা তো আপনার উপকারেই কাজে লেগেছিল।

এরপর আপনি যেদিন বললেন, আবৃত্তি দলের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে এক জায়গায় যাবেন, তখন আমি দুষ্টামি করেই ২০ হাজার টাকা ধার চাইলাম। তারপরও আপনি আপনার কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাইকে দিয়ে আমার নগদ পারসোনাল নম্বরে টাকা পাঠালেন। টাকাটা আমি পকেটেই রাখলাম। আর বললেন, আপনার আবৃত্তি দলের বন্ধুরা চারজন ছেলে এবং চারজন মেয়ে বিয়ার গিলছেন, বারবিকিউ পার্টি করছেন। রাত তখন ১২ টা পেরিয়ে গেছে। এক বড় ভাইকে সাথে নিয়ে বিকাশের দোকান খুঁজে আপনার বাসার নিচে গিয়ে আপনার ছোট ভাইকে কল দিলাম। কিন্তু তখন আপনার ভাই বললেন, কাল পাঠিয়ে দিয়েন বিকাশে। আমি ঠিক তাই করার আগে সকাল সাড়ে ১১ টায় মাতাল অবস্থায় বাসায় গিয়ে আমার সাথে কথা বলতে পারবেন না, বলে জানালেন। পরে ম্যাসেজ করে বললাম, টাকাটা কি ছোট ভাইয়ের নম্বরে পাঠাবো না আপনার নম্বরে পাঠাবো। যথারীতি উনার নম্বরে সকাল ১১ টা ৫৫ এর দিকে টাকা পাওয়ার পর তিনি ঘুমিয়ে পরলেন। আমি যথারীতি ঘুমাতে গেলাম।

আপনি নিজে জানেন, আপনার চরিত্র কেমন, আমি জানি আমার টা কেমন। তাই কে কাকে নিয়ে কি বললো তাতে আপনার বা আমার কিছু যায় আসে না। আপনার কাছের মানুষজনকে কখনোই আমার সাথে পরিচয় করিয়ে তো দূরের কথা , কাছেই ভিড়তে দেননি। কোনো এক গোপন ভয় কাজ করতো আপনার মধ্যে। তারপর আপনার কাছের মানুষগুলোই আপনাকে ছোট করে, আমার কাছে এসে অনেক কিছু কথা বলেছে যেগুলো আপনার মুখ থেকে শুনলে আমার মোটেও খারাপ লাগতো না।

আমি চাই না, সংগীত জানা কেউ আমার জীবনে আসুক, এমনকি বন্ধুও হতে যাবো না। আপনাকে আজ ফোন করলাম এই কারণে আমি জানতাম, আপনি আমার জন্মদিনের উপহার দেয়ার জন্য আসতে পারেন। কিন্তু আমি এমন কারো উপহার গ্রহণ করতে অপারগ যিনি আমার সাথে মিথ্যা বলে গেছেন দিনের পর দিন।

আমি যখনই যাকে বিশ্বাস করতে গিয়েছি, জিতে গেছি, অল্প সময়ের মধ্যেই। আমার ফেসবুকে কে বা কারা বন্ধু হবে সেটা নির্ধারণ করে দেয়ার মতো অধিকার কি আপনি আদায় করতে পেরেছিলেন? কি এমন ভয় ছিল আপনার, যে আপনার পরিচিতরা এমন কিছু বলবে যাতে আপনাকে ভুল বুঝতে হবে। শেষ পর্যন্ত ভুলটাই সঠিক হলো।

ভগবান আমাকে আবারও বাঁচিয়ে দিয়েছেন, আপনার পরিচিতরা যেভাবে আপনাকে ছোট করেছে, তাতে আমি বিস্মিত হয়েছি। ঘটনাগুলো যদি সত্যি হয় তাহলে আপনি চরম মিথ্যাবাদী। আপনি আমাকে কখনো বুঝতেই চাননি। আর শুরু থেকেই কথা ছিল আমাদের মাঝে কোনো চাওয়া পাওয়া থাকবে না। চিরকাল বন্ধু হয়ে থাকবেন। আজকেও যখন ফোন করলাম তখনো কেটে দিলেন মুখের ওপর। হয়তো আপনি এমন কারো সামনে আছেন যার সামনে আপনি কথা বলতে পারবেন না। কারণ তো কিছু একটা আছেই। আপনি যদি আপনার পরিবারের কাছে আমার কথা বলেই থাকতেন, অবশ্যই পরিবারের লোকজনের সামনেই কথা বলতে পারতেন। এরপরও বলি, যদি পরিবারে আমার কথা বলেই থাকেন, তাহলে বলবেন উনি (উৎপল দাস) মারা গেছেন। এই মুহুর্তের পর থেকে আমি আপনার এবং আপনার পরিবারের কাছে মৃত মানুষ। আপনি আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, সেই সুযোগও দিলাম না। নিজেকেই আপনার কাছে মৃত ঘোষণা করলাম। মৃত মানুষের ওপর কোনো রাগ রাখবেন না প্লিজ। আপনার এবং আপনার পরিবার এমনকি নতুন কাউকে নিয়ে সুখী হবেন এই প্রত্যাশায় বিদায়।

লেখক: সাংবাদিক