ঘরেই স্বামীকে টুকরো টুকরো করে স্ত্রী
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও বনানী থানা এলাকার আমতলী থেকে উদ্ধারকৃত খন্ডিত লাশের রহস্য উন্মোচন করাসহ এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। উদ্ধারকৃত খন্ডিত লাশটি ভিকটিম ময়না মিয়ার।
গ্রেফতারকৃত হলেন- ফাতেমা খাতুন। তার দেখানো মতে বোরখা, ভিকটিমের রক্তমাখা জামাকাপড়, ধারালো ছুরি, ধারালো দা, বিষাক্ত পেয়ালা, শীল পাটা ও খন্ডিত মাথা উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুর ১২টায় বনানী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ফাতেমা খাতুন ভিকটিমের প্রথম পক্ষের স্ত্রী।
প্রসঙ্গত, রোববার রাত সাড়ে ১০ টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের আমতলী এলাকায় একটা নীল রঙের ড্রামের মধ্যে বনানী থানা পুলিশ একজন পুরুষ ব্যক্তির মাথাবিহীন দেহ উদ্ধার করে। একই রাতে ১১টার পর মহাখালী বাস টার্মিনালের এনা কাউন্টারের কাছে একটা ব্যাগের মধ্যে উরু থেকে খণ্ডিত দুইটি পা এবং কাঁধ থেকে খণ্ডিত দুইটি হাতের অংশ উদ্ধার করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশ। সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের সহায়তায় মৃত ভিকটিমের পরিচয় সনাক্ত করা হয়। গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি টিম নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
যুগ্ম কমিশনার বলেন, রোববার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও বনানী থানা থেকে ভিকটিম ময়না মিয়ার খন্ডিত লাশ পাওয়া যায়। ভিকটিমের কর্তিত দুইটি পা এবং দুইটি হাতের খন্ডিত অংশ পাওয়া যায় মহাখালী বাস টার্মিনালের এনা কাউন্টারের সামনে এবং শরীরের বাকী অংশ পাওয়া যায় বনানীতে। এরপর বনানী লেক থেকে ডুবুরি দিয়ে ভিকটিমের খন্ডিত মাথাটি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ফাতেমা খাতুন থাকে কড়াইল বস্তিতে। সেখানে স্বামী স্ত্রীর অমিল, গ্রেপ্তারকৃতের উপার্জিত টাকা পয়সা নষ্ট ও একাধিক বিবাহকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের সাথে তার মনোমালিন্য হয়। ভিকটিম তাকে মেরে ফেলার কথা বললে গ্রেপ্তারকৃত ফাতেমা পূর্ব পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করেন। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামি ভিকটিমের প্রথম স্ত্রী ফাতেমাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, গত ২৩ মে থেকে গ্রেপ্তারকৃতের স্বামী ভিকটিম ময়না মিয়া কড়াইল এলাকায় তার বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। পারিবারিক কলহ, টাকা-পয়সা বণ্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে ময়না মিয়ার সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। এক পর্যায়ে ফাতেমা পরিকল্পনা করে তার স্বামীকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে নিস্তেজ করেন এবং পরবর্তীতে জবাই করে লাশ গুম করেন।
গ্রেপ্তারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক কড়াইল এলাকা থেকে ফাতেমা দুই পাতা ঘুমের ট্যাবলেট কিনে শুক্রবার রাতে জুসের সঙ্গে স্বামীকে খাইয়ে দেন। সারারাত ও পরের সারাদিন তার স্বামী ঘুমে অচেতন থকার পর সন্ধ্যার দিকে কিছুটা সম্বিত ফিরে পেয়ে স্ত্রীকে বকাবকি করে মারধর করতে গিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়েন। এ সময় ময়না মিয়া পানি পানি বলে আর্তনাদ করলে ফাতেমা ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস আবার তার মুখে ঢেলে দেন। এক পর্যায়ে ময়না মিয়া নিস্তেজ হয়ে খাটে পড়ে গেলে ফাতেমা তার ওড়না দিয়ে স্বামীর দুই হাত শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখেন এবং তার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেন। এরপর তার বুকের উপরে বসে বাসায় থাকা নতুন ধারালো স্টিলের চাকু দিয়ে স্বামীর গলা কাটা শুরু করেন।
তিনি বলেন, একপর্যায়ে ফাতেমার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে ময়না মিয়া নিজের হাত মুক্ত করে ফাতেমার হাতে খামচি এবং কামড় বসিয়ে দেন। এতে ফাতেমার রাগ আরও বেড়ে যায়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ময়না মিয়া ও ফাতেমা দুজনেই খাট থেকে পড়ে গেলে ফাতেমা ময়নার বুকের উপরে উঠে তার গলার বাকি অংশ কেটে ফেলেন। এভাবে রাত অতিবাহিত হলে সকালবেলা ফাতেমা লাশ শুম করার জন্য ধারালো চাকু দিয়ে ময়না মিয়ার হাত ও পা দেহ থেকে আলাদা করে খণ্ডিত অংশ তিন ভাগে রাখেন।
তিনি আরও বলেন, একটি লাল রঙের কাপড়ের ব্যাগে মাথা, শরীরের মূল অংশকে একটি নীল রঙের পানির ড্রামে এবং খণ্ডিত দুই পা ও দুই হাতকে একটি বড় কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখেন ফাতেমা। এরপর তেরোশো টাকায় রিকশা ভাড়া করে প্রথমে আমতলী এলাকায় শরীরের মূল অংশ ফেলে দেন, পরবর্তীতে মহাখালী এনা বাস কাউন্টারের সামনে খণ্ডিত দুই হাত, দুই পা ভর্তি ব্যাগ রেখে দিয়ে চলে আসেন বাসায়। সেখান থেকে গ্রেপ্তারকৃত ফাতেমা খন্ডিত মাথার ব্যাগটি নিয়ে বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে গুলশান লেকে ফেলে দিয়ে বাসায় আসেন ।
ভিকটিমের দ্বিতীয় স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বনানী থানায় মামলা হয়েছে মর্মে পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান। গ্রেপ্তারকৃতকে রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস