খাল ভরাট : শঙ্কায় কৃষক পরিবার
কুমিল্লার দেবিদ্বারে প্রবাহমান ভানী খাল ভরাট করা হচ্ছে। খাল ভরাটে বন্যা ও জলাবদ্ধতাসহ ফসলি জমি বিলীনের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০ গ্রামের সাধারণ মানুষ। ক্ষতির শঙ্কায় কয়েকশ কৃষক পরিবার।
খাল ভরাটে পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে ফসলি জমি নষ্ট, জলাবদ্ধতা ও বন্যা সৃষ্টির ফলে ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হবেন বলে জানান কৃষকরা।
তাদের অভিযোগ, খাল ভরাট করে সেখানে নির্মিত হচ্ছে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প। মাত্র ৪০ জন ভূমিহীনদের জন্য খালটি ভরাট করায় দেবিদ্বার উপজেলার ভানী, আছাদ নগর, খিরাইকান্দি, বখরিকান্দি, আন্দিরপাড়, মধ্যনগর, টেবারিয়াসহ প্রায় ২০ গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং কয়েকশ কৃষক পরিবার দুর্ভোগে পড়বেন। দ্রুত ওই খাল উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
দেবিদ্বারের ভানী ইউনিয়নের আরও একাধিক স্থানে সরকারের খাস জমি থাকলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান ও কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে লাখ লাখ হেক্টর ফসলি জমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল গোমতী নদীর শাখা ভানী খাল ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণে ভরাটকৃত ভানী খাল পাড়ের সরকারি খাস জায়গাটি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছিল ১৩ জন দরিদ্র ব্যক্তির মাঝে। বন্দোবস্তকৃত সম্পত্তির কাগজপত্র বাতিল না করেই ভেকুদ্বারা ৮/৯ ফুট গভীর করে উক্ত প্রকল্পের জন্য মাটি কাটার কাজ করা হয়েছে। বন্দোবস্তকৃত সম্পত্তিতে মাটি কাটায় বাধা দেওয়াতে কোনো প্রকার আশ্বাস বা সান্ত্বনা না দিয়ে উল্টো মারধরসহ হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় মাটির জন্য প্রকল্প থেকে ৮০০ গজ উত্তরে জোরপূর্বক অবৈধভাবে স্থানীয়দের মালিকানাধীন পুকুরে ড্রেজার বসানো হয়েছে। উক্ত পুকুর পাড়ে প্রায় ১০০ পরিবারের বসবাস। ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে এই পুকুর থেকে মাটি, বালু উত্তোলণে আশপাশের বাড়িঘর পুকুরে ভেঙে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এইসব অভিযোগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের দুষছেন এলাকাবাসী।
৭০ বছরের বৃদ্ধ কৃষক আবদুল মজিদ জানান, মাঠে তেমন ব্যক্তিগত ফসলি জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল উৎপাদক করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। ভানী খাল ভরাট করায় পানির চলাচল বন্ধ হয়ে ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে বন্ধ হয়ে পড়বে ফসলি জমিতে চাষাবাদ।
আবুল কালাম নামে এক বাসিন্দা জানান, ভানীমুজা গ্রামের মৌজার ১৮৪৯ দাগে তারা ১৩ জন দরিদ্র ব্যক্তি ভরাট খাল পাড়ে সরকার থেকে সম্পত্তি বন্দোবস্ত নেয়। বন্দোবস্তের সকল ধরণের কাগজপত্র ভুক্তভোগীদের কাছে আছে। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাদের কোনো প্রকার চিঠি বা নোটিশ না দিয়ে ভেকুদ্বারা মাটি কাটার কাজ করা হয়। ভুক্তভোগীরা বাধা দিতে গেলে তাদের কোনো কাগজপত্র না দেখে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন বন্দোবস্ত নেয়া ব্যক্তির মারধর ও হত্যার হুমকি দেয়।
কামরুল হাসান মামুন নামে আরও এক ভুক্তভোগীর জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা শুরু করলে পুকুরের চার পাশে থাকা শত বসতঘর, বাড়ি ভেঙে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
তবে এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, ভরাট অংশ সরকারি খাস জমি। খাল আগেই দখল করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে খালের দখলকৃত অংশ উচ্ছেদ করবে প্রশাসন, যাতে পানির চলাচল বন্ধ হয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অন্যদিকে পুকুরে নয় খালে ড্রেজার বসানো হয়েছে। মানুষের যেন ক্ষতি না হয় সেই বাবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।
ভানী খাল ভরাট, বন্দোবস্ত সম্পত্তি দখল ও ড্রেজার বসানোর কোনোটাই সত্য নয় জোনিয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে কোনো সাধারণ মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, সেদিকে আমরা সবসময় খেয়াল রাখছি। অভিযোগ পেয়ে দেবিদ্বার উপজেলার নির্বাহীর সঙ্গে কথা হয়েছে। যতটুকু জানতে পেরেছি ভানী গ্রামে গৃহহীন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে স্থানীয় রাজনীতির পুরনো দ্বন্দ্ব কাজ করছে। খাল ভরাটে কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি মাথায় থাকবে আমাদের।
প্রকৌশলনিউজ/এসএআই