বেশির ভাগ রোগীই জানেন না তারা আক্রান্ত: বিইএস


প্রকৌশল প্রতিবাদক :
বেশির ভাগ রোগীই জানেন না তারা আক্রান্ত: বিইএস
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। যাদের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি রোগীই জানেন না, তারা এ সমস্যায় আক্রান্ত। এ ছাড়া নারীদের থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গর্ভবতী নারীদের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে ২০-৩০ শতাংশের কোনো না কোনো থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা রয়েছে। গ্রামের পরিস্থিতির কোনো রেকর্ড নেই। তবে ধারণা করা যায় সেখানকার অবস্থা আরও করুণ।

শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে বাংলাদেশে হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রধানতম সংগঠন ‘বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি’ (বিইএস) আয়োজিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন বিইএস প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান।

ডা. মো. ফারুক পাঠান বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ। বিষয়গুলো খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে না, এটা খুব ভয়াবহ। মাতৃগর্ভ থেকেই শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি হয়। যদি মাতৃগর্ভে শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থি সঠিকভাবে তৈরি না হয়, তাহলে সে পৃথিবীতে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আসবে। গর্ভধারণের আগেই থাইরয়েড সমস্যা পরীক্ষা করা দরকার। পরিণত বয়সেও এ রোগের প্রকোপ যথেষ্ট আছে।’

থাইরয়েড সমস্যাকে আলোচনার টেবিলে সীমাবদ্ধ না রেখে সরকার ও অংশীজনদের সমন্বয়ে ‘বিশেষ ভূমিকায়’ গুরুত্বারোপ করেন দেশের জ্যেষ্ঠ হরমোন বিশেষজ্ঞ।

পরে এ বিষয়ে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নুর।

আন্তর্জাতিক এন্ডোক্রাইন কনফারেন্সে অন্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে জেনেটিক ইনভেস্টিগেশন প্রয়োজন। এখন প্রায়ই এমন অনেকে আসেন যাদের সন্তানদের বয়স বাড়লেও শারীরিক গঠন বাড়ছে না। এই সমস্যা সমাধানে আরেও গবেষণা প্রয়োজন। 

তারা বলেন, ‘নারীদের ক্ষেত্রে এখন এই সমস্যা বেশি লক্ষ্যণীয়। নারীদের থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।’

বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির (বিইএস) সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘টেস্টোস্টেরন ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা থেকে এসেছে। ইস্ট্রোজেন-টেসটোস্টেরন প্রস্তুতির সাথে সম্পর্কিত সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি হল অ্যালোপেসিয়া, ব্রণ এবং হিরসুটিজম, যদিও এগুলো ডোজ ও সময়কাল নির্ভর এবং সাধারণ নয়। মহিলাদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের ব্যবহার যৌন কর্মহীনতা টেসটোস্টেরন প্রতিস্থাপন সাধারণত লিবিডো, যৌন আনন্দ, এবং প্রচণ্ড উত্তেজনা সংক্রান্ত সমস্যাগুলির চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হয়।  ৫০ শতাংশের মতো পোস্টমেনোপজাল মহিলাদের যৌন কর্মহীনতা রয়েছে, এবং কম টেস্টোস্টেরন স্তর এই মহিলাদের মধ্যে কোইটাল ফ্রিকোয়েন্সি হ্রাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘মহিলাদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের ব্যবহার পোস্টমেনোপজাল হরমোন থেরাপি শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য ইস্ট্রোজেনের তুলনায় ইস্ট্রোজেন প্লাস টেস্টোস্টেরনের সুবিধার জন্য খুব কম প্রমাণ রয়েছে। বিষণ্ণতা, রাগ, মেজাজ, অনিদ্রা এবং টানা অসুস্থতা পোস্টমেনোপজাল মহিলাদের সাধারণ অভিযোগ। সীমিত সংখ্যক গবেষণায় দেখা গেছে যে ইস্ট্রোজেনের সাথে টেস্টোস্টেরন যোগ করার পর স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়।’

এই চিকিৎসক বলেন, মহিলাদের মধ্যে এর প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায় যেমন, ভাসোমোটর, বেশি ঘাম হওয়া, অনিদ্রা ও ঘুমের ছন্দে ব্যাঘাত, স্নায়ুবিক ব্যাধি, অমার্জিত আচরণ, অলসতা, সুস্থতার বোধ কমে যাওয়া, হতাশার লক্ষণ ইত্যাদি। মহিলাদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন ছাড়াও ব্যবহার করার সময় মোট কোলেস্টেরল এবং এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে, যদিও হৃদরোগের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলি জানা যায়নি।

কনফা‌রে‌ন্সে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান, ডিরেক্টর জেনারেল (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের (বিইউএইচএস) ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. হাজেরা মাহতাব, বারডেম হাসপাতালের সাবেক ডিরেক্টর জেনারেল অধ্যাপক ডা. জাফর আহমেদ লতিফ, বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. এহতেসামুল হক চৌধুরী, স্বাচিপ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ, সভাপতি অধ্যাপক এসএম আশরাফুজ্জামান।