হজের বিমান ভাড়া কমানোর দাবি জানাল হাব
সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আগামী বছর হজযাত্রার খরচ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ২০২৩ সালের অযৌক্তিক বর্ধিত বিমান ভাড়া কমানোর জন্য বিমান প্রতিমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। তারা ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিমান ভাড়ার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ২০২৩ সালে নির্ধারিত ভাড়াকে একেবারে অযৌক্তিক দাবি করে যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণের আবেদন জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার হাবের মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার স্বাক্ষরিত চিঠিটি বিমান প্রতিমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়। অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যার্থে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়।
এতে ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণার জন্য হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণের লক্ষে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সমন্বয়ে একটি সভা আয়োজনের জন্য বিমান মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। একইসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণে প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে হাব।
এ বিষয়ে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, আমরা আশা করছি আগামী বছর সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে প্রতিমন্ত্রী মহোদয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে এবার বর্ধিত বিমান ভাড়া কমানোর কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা শুধু চিঠি দিয়ে বসে থাকবো না, বরং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেখা-সাক্ষাৎ করে আলাপ-আলোচনা করবো। তাদের বুঝাবো কমানোর যৌক্তিকতা কী, এর সুফল কী হবে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবতার নিরিখে অনেক বেশি ও অযৌক্তিক ছিল। যে কারণে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সর্বমহলে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি বরং সমালোচিত হয়েছে। যেহেতু বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, তাই তাদের একক কর্তৃত্বে বিমান ভাড়া নির্ধারণ যথাযথ হয়নি। বরং এই অতিরিক্ত বিমান ভাড়া এবং হজ প্যাকেজের উচ্চমূল্য নিয়ে হজযাত্রীসহ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
‘আমরা ২০২৩ সালে এই অযৌক্তিক বিমানভাড়া কমানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু হজের একেবারে শেষ সময় চলে আসায় সম্ভব হয়নি। আগামী বছর হজযাত্রীরা যাতে স্বস্তির সাথে হজ করতে পারেন এজন্য আগেভাগেই এটি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২২ সালে হজযাত্রীদের বিমানভাড়া ১২ হাজার বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল মূলত করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধে জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধি এবং তখন করোনায় বিমানের কিছু আসন খালি রেখে ফ্লাইট পরিচালনার যুক্তি দেখিয়ে। সে প্রেক্ষিতে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের প্রত্যাশা ছিল, করোনা-পরবর্তী বিমানভাড়া কমবে। কেননা জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধি হয়নি। সৌদি আরব কোনও নতুন চার্জ আরোপ করেনি। ২০২৩ সালের বিমানের আসন খালি রেখে হজযাত্রী পরিবহন করতে হয়নি। অথচ ২০২৩ সালের হজযাত্রীদের বিমানভাড়া ২০২২ সাল থেকে ৫৭ হাজার ৭৯৭ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। এই বেশি মূল্যের বিমান ভাড়া এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ অযৌক্তিক ও অসহনীয় মনে করেছেন। এতে তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। তাই ২০২৪ সালের বিমানভাড়া নির্ধারণে উল্লেখিত বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ২০২৩ সালের বর্ধিত ভাড়া থেকে কমিয়ে যৌক্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।
২০২৪ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণার নিমিত্তে হজযাত্রীদের বিমানভাড়া নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সমন্বয়ে একটি সভা আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে চিঠিতে বলা হয়, সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী ড. তাওফিক বিন ফাওজান আল রাবীয়া ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সফর করেছেন। সফরকালে তিনি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে ২০২৪ সালের হজ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও সৌদি উভয় অংশের হজ প্যাকেজের মূল্য কমানোর লক্ষে উভয়পক্ষ দৃঢ় ঐক্যমত্য পোষণ করেন। বাংলাদেশ অংশে হজের খরচের প্রায় সিংহভাগই বিমানভাড়া। সঙ্গত কারণেই হজযাত্রীদের বিমানভাড়া কমিয়ে ২০২৪ সালের বিমানভাড়া সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা অত্যাবশ্যক মনে করে হাব।