৮ বছরেও খোঁজ মেলেনি ব্যবসায়ী বাছেদের
আট বছর আগে অপহরণের শিকার হন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী বাছেদ আলম। অপহরণের সময় তার ছোট্ট সন্তানের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশোরের কাছে বাবার স্মৃতি এখন অনেকটা ফিকে। আর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার্থী বড় ছেলের প্রতিটি দিন কাটে বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায়। স্ত্রী পুতুল চৌধুরী এখনো স্বামীর পথের দিকে চেয়ে চোখের পানি ফেলেন। তিনি বিশ্বাস করেন, বাছেদ আলম জীবিত আছেন। একদিন ঠিকই ফিরবেন। ব্যবসায়ী বাছেদ আলম নিখোঁজের ৮ বছর পরও পরিবারের প্রতিটি সদস্যের বুকে চলে এমনই হাহাকার।
এই অপহরণের ঘটনায় ফতুল্লা থানায় মামলা হয়। পুলিশ অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করে। তারা জামিনে মুক্ত হয়ে চলে গেছেন আত্মগোপনে। কিন্তু বাছেদের খোঁজ মেলেনি। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকার বাসিন্দা বাছেদ পুরান ঢাকার ইসলামপুরে কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ তিনি নিখোঁজ হন। বাছেদ আলম এখনো জীবিত বলে বিশ্বাস তার স্ত্রী পুতুল চৌধুরীর।
তিনি জানান, নিখোঁজ হওয়ার সময় বাছেদের ৩টি মোবাইল ফোন নম্বরের মধ্যে বাংলালিংক ও এয়ারটেল নম্বর দুটি বন্ধ রয়েছে। ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারিতে হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে ওঠে বাছেদের ব্যবহৃত রবি নম্বরটি। পরে ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তখন নম্বরটি ব্যবহার করছিল এক নারী। অবস্থান ছিল চট্টগ্রামে। বিষয়টি র্যাব-১১ এর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট বাছেদের ব্যবহৃত ফেসবুক একাউন্টও সক্রিয় হয়ে উঠেছিল।
জানা গেছে, মামলার পর ওই বছরের ১৭ মার্চ দুইটি মোবাইল নম্বর থেকে বাছেদের মুক্তির জন্য ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। বাছেদ তখন নজরুলের জিম্মায় বলে জানানো হয়। বাছেদের বাড়ির অদূরে সাদ্দাম মার্কেট এলাকার বাসিন্দা নজরুল। একটি মোটরসাইকেল বিক্রি নিয়ে নজরুল-বাছেদের বিরোধ হয়। বাছেদের সঙ্গে টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল মামাতো ভাই খোকনেরও।
৬ মার্চ বাছেদ ধারের ১৫ লাখ টাকা ফেরত চাওয়ায় খোকনের সঙ্গে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে খোকন বাছেদকে হুমকি দেন, তোকে দুনিয়ায় থাকতে দেব না। হুমকির ৭ দিনের মাথায় বাছেদ অপহৃত হন। বাছেদ অপহরণের পর পুলিশ নজরুল, তার স্ত্রী আয়েশা ও শ্যালিকা লাকীকে গ্রেফতার করে। লাকীই নজরুলের কথায় বাছেদের পরিবারকে ফোন করে মুক্তিপণ চেয়েছিল।
পরে এ তিনজনই জামিনে মুক্তি লাভ করেন। নজরুল জামিনে মুক্ত হয়ে পালিয়ে যান। মামলার বাদী নিখোঁজ বাছেদের বাবা অহিদুল আলম ২০১৪ সালের ৯ জুলাই মারা যান। এরপর থেকে কার্যত মামলার অগ্রগতি থমকে গেছে। স্বামী বাছেদ আলম বেঁচে আছেন, তিনি ফিরে আসবেন- এমন আশায় বুক বেঁধে আছেন দুই সন্তানের জননী পুতুল চৌধুরী।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের আগস্টে নজরুলের একটি ফেসবুকে বাছেদ আলম ও আসামি নজরুলের ছবি দেখতে পাই। পরবর্তীতে ওই ফেসবুক থেকে বাছেদ এবং নজরুলের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। বিষয়টি আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। কিন্তু ৮ বছরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বামী বাছেদের সন্ধান দিতে না পারায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।