কঠোর লকডাউন : রাজধানীতে যানজট ও মানুষের ভিড়
কঠোর বিধিনিষেধ একদিন শিথিলতার পর রাজধানী আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। সোমবার (২ আগস্ট) রাজধানীর সর্বত্রই যানবাহন এবং মানুষের চাপ গত এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ব্যক্তিগত গাড়ীর সংখ্যা অন্য যেকোন দিনের তুলনায় বেশী। সড়কের চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই যে, দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। আপরদিকে, কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা চালু রয়েছে। কর্মজীবী মানুষকে প্রতিদিন অফিসে ছুটতে হচ্ছে।
কঠোর বিধিনিষেধ একদিন শিথিলতার পর রাজধানী আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। সোমবার (২ আগস্ট) রাজধানীর সর্বত্রই যানবাহন এবং মানুষের চাপ গত এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ব্যক্তিগত গাড়ীর সংখ্যা অন্য যেকোন দিনের তুলনায় বেশী। সড়কের চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই যে, দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। আপরদিকে, কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা চালু রয়েছে। কর্মজীবী মানুষকে প্রতিদিন অফিসে ছুটতে হচ্ছে।
রবিবার ১৬ ঘণ্টার জন্য গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও আজ দুপুরে রাজধানীর সড়কে অবাধে যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল করে। গাবতলী-গুলিস্থান, মোহাম্মদপুর-সাইনবোর্ড, মিরপুর- গুলিস্থানসহ সব রুটের গণপরিবহন আজ দুপুর পর্যন্ত চলতে দেখা গেছে। এর পাশাপাশি সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করে। রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল বেড়ে যাওয়ায় সব রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। শিল্প-কারখানা ও গার্মেন্টস খোলার পর অতিরিক্ত গাড়ির চাপে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
গণপরিবহন চলাচল এর অনুমতি না থাকলেও আজ দুপুর ১২টার দিকেও যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়। মহাখালী থেকে বিমানবন্দর সড়ক, ফার্মগেট থেকে মহাখালী, ফার্মগেট থেকে বাংলামটর, এলিফ্যান্ট রোডসহ সব সড়কেই ব্যক্তিগত গাড়ির ছড়াছড়ি। এছাড়া অন্যান্য যানবাহনের ব্যাপক চাপ থাকায় প্রতিটি সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
রাজধানীর সড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোন চেকপোষ্ট চোঁখে পড়েনাই, তারা মোটামুটি অনান্য দিনের তুলনায় নিষ্ক্রিয়। অন্যান্য দিন নগরীর যেসব জায়গায় পুলিশের চেকপোস্ট ছিল আজ সেখানে কোনো চেকপোস্ট এবং পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। মোটকথা পুলিশের উদাসীনতা এবং সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সব ধরনের যানবাহন ঢাকার রাস্তায় চলাচল করছে।
সদরঘাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচলের ভোর পর্যন্ত অনুমতি থাকায় সকাল ৯টার মধ্যে লঞ্চগুলো সদরঘাট টার্মিনালে এসে পৌঁছে। যাত্রী নেমে যাওয়ার পর টার্মিনাল পুরো ফাঁকা হয়ে যায়। সকাল দশটার পর টার্মিনাল থেকে সব লঞ্চ সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নৌপথের পাশাপাশি মহাসড়কেও যানবাহনের ব্যাপক চাপ বেড়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আজ ২০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীতে মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এবং পর্যাপ্ত গণপরিবহন না থাকায় রাজধানীবাসী কর্মস্থলে এবং জরুরি কাজে যাওয়ার পথে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। যানবাহনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বাস বন্ধ রেখে অফিস খুলে দেওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
রাজধানীর শ্যামলী, মোহাম্মদ পুর ঘুরে দেখা যায়, প্রচুর ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। এমনকি ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলও যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন, মতিঝিল এলাকায়ও একই দৃশ্য দেখা গেছে।
বনানীতে একটি বেসরকারী অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সরোয়ার জাহান সজীব বলেন, অফিস চালূ থাকার কারণে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই অফিসে যেতে হয়। যেহেতু অফিসে যেতে হয় সেহেতু কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সুফল মিলছে না। মতিঝিলে কাজ করা এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, এখানকার প্রায় ৯০শতাংশ অফিস খোলা। অফিস যেহেতু খোলা তাই বিধিনিষেধের মধ্যেই আসতে হচ্ছে। তবে, আজ রাস্তায় জ্যাম থাকলেও আসতে কোন সমস্যা হয়নি।
সকাল সাড়ে ৯টায় রামপুরা এলাকায় পিকআপের যাত্রী হয়ে লোকজনকে অফিসে যেতে হয়। মানুষে ঠাসা ছোট পিকআপটি মতিঝিল হয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে চলে যায়। যাত্রাবাড়ী এলাকায় রিকশাভ্যানে পাঁচ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে লোকজনকে যেতে হয়েছে। তারপরে সবাই যেতে পারেনি, হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলের রওনা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, খুব জরুরী প্রয়োজনে বাইরে যাবার কথা বললেও তারা বিভিন্ন কাজে বাইরে বের হচ্ছে। এদের কোন কারণেই থামানো যাচ্ছেনা। আমরা তাদের সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছি।
গণভবন এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আতিক মাহমুদ বলেন, কিছু অফিস আদালত বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ দিনের তুলনায় গাড়ীর চাপ কম। তিনি আরো বলেন, আমরা নিজেরাও সাধ্যমাত বোঝানোর চেষ্টা করছি মানুষদের তারা যেন অকারণে বের না হন। যতক্ষণ না মানুষ নিজেরা সচেতন না হয় ততদিন লকডাউন আইন দিয়ে বাস্তবায়ন সম্ভবনা।
সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে বিধিনিষেধ আরোপ করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছিল বিধিনিষেধ। এরপর আবার গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার।
বিধিনিষেধের মধ্যে খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন/প্রক্রিয়াজাতকরণ মিল কারখানা, কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানা ছাড়া বন্ধ আছে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি ও বেসরকারি অফিস এবং শিল্পকারখানা। বন্ধ রয়েছে দোকান ও শপিংমলও। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের বাইরে বের হওয়াও নিষেধ।