শত কোটি টাকার মালিক সিলেট সওজ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী!
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।
তুষার কান্তি সাহার অবৈধ ভাবে এই সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, এই সমস্ত সম্পদ তিনি তার বেতনের বাইরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্জন করেছেন। তুষার কান্তি সাহা ১৯৮৯ সালের ১৬ মে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। ঢাকায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্ট্রাকচার ডিজাইন বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ১৯৮৯ সালের ২১ জুন থেকে ১৯৯২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন তুষার কান্তি। শুরু থেকে অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় তৈরী শুরু করেন তুষার কান্তি।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২০ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখ হতে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও গোপালগঞ্জে ইজিপি দরপত্র আহ্বানে বিভিন্ন শর্তে বাধ্যতামূলক কাগজপত্র দাখিল করার শর্ত ছিল। কিন্তু বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দূর্বল থাকায় ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার শর্তে একক ক্ষমতাবলে বিপুল অংকের টাকা নিয়েছেন।
তিনি তার গোপালগঞ্জে চাকুরীকালীন সময়ে এলটিএম, আরএফকিউ, ফেরী, ব্রীজ টোল অনিয়ম এবং বিভিন্ন নামে শত শত কোটেশন করে অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তুষার কান্তি সাহার রয়েছে নারায়নগঞ্জের চাষাড়া এলাকায় ১০ কাঠা জমির মধ্যে ১০ তলা বিলাসবহুল বাড়ি। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১২ কোটি টাকা। নারায়নগঞ্জ স্টেডিয়ামের পাশে তার রয়েছে আড়াই বিঘা জমি। যার বাজার মূল্য আনুমানিক সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা শহরে ৫টি পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে তার। এসব সম্পদের বাজার মূল্য আনুমানিক ৪৫ কোটি টাকা বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তুষার কান্তি সাহা হুন্ডির মাধ্যমে বহু টাকা ভারতে পাচার করেছেন। ভারতের বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে তার নগদ অর্থ ও এফডিআর। দেশে তার ভাই বোনদের নামে করেছেন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ, কিনেছেন আরও অনেক সম্পদ।
তুষার কান্তি সাহা ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক সার্কেল খুলনা, ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৯৫ পর্যন্ত সড়ক সার্কেল বরিশাল এবং ঢাকায় ব্রিজ ডিজাইন বিভাগ-৩ এ ১৯৯৫ সালের ১৬ আগস্ট থেকে ১৯৯৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এরপর ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০১ সালের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত কুষ্টিয়া সড়ক উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। একই পদে ৩০ এপ্রিল ২০০১ থেকে ৭ এপ্রিল ২০০৭ পর্যন্ত মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগে কর্মরত ছিলেন তুষার কান্তি সাহা।
এর মাঝে তিনি মির্জাপুর সড়ক বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে ৮ এপ্রিল ২০০৪ সাল থেকে প্রায় এক বছর বিনা অনুমতিতে ভারতে পলাতক থাকেন এবং এর জন্য তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয় বলেও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে।
পরে দীঘিনালা সড়ক উপ-বিভাগে ২০০৫ সালের ২০ মার্চ থেকে ১৭ আগষ্ট এবং একই বছরের ১৮ আগষ্ট থেকে ২০০৮ সালের ২৭ মে পর্যন্ত তিনি নয়ারহাট সড়ক উপ-বিভাগে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নড়াইল সড়ক বিভাগে ২০০৮ সালের ২৮ মে থেকে ২০১০ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন তুষার কান্তি। এছাড়া, ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগে এবং একই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ৮ আগষ্ট পর্যন্ত শরিয়তপুর সড়ক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালের ৯ আগস্ট থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নারায়নগঞ্জ সড়ক বিভাগে এবং একই বছরের ১২ এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের ৮ মে পর্যন্ত ঢাকার প্ল্যানিং ডিভিশনে এবং ২০১৩ সালের ১৯ মে থেকে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এরপর ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্রীজ ডিজাইন সার্কেল ঢাকায় এবং ২০১৭ সালের ১২ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ২৮ জুন পর্যন্ত রাজশাহী সড়ক সার্কেলে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ২০১৮ সালের জুন থেকে একই বছরের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সড়ক ও জনপদ বিভাগের চট্টগ্রাম জোনে, একই বছরের ৭ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত গোপালগঞ্জ জোনে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তুষার কান্তি সাহা।
সর্বশেষ বর্তমানে তিনি সড়ক ও জনপদ এর সিলেট জোনে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে আছেন। ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি এই জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।
এক কোটি টাকার বিনিময়ে তুষার কান্তি সাহা এই সিলেট জোনের দায়িত্ব নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তার পছন্দের জায়গায় বদলী না হলে তিনি টাকার বিনিময়ে তদবির করে বরাদ্দ বেশী থাকা ডিভিশনে যোগদান করেন। প্রমাণস্বরূপ দেখা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের বদলীর চিত্র।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, এই বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে চান না।