দুদক আর বদলী আতঙ্কে গণপূর্ত অধিদপ্তর!
গৃহায়ণ ওগণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থত গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২’শ বছরের ইতিহাস দুর্নীতি,অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসছে। গত বছর থেকে নানা বির্তকিত কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে চলছে। সেই রুপপুরের বালিশকাণ্ড থেকে শুরু করে হালের বির্তকিত ঠিকাদার জি কে শামীম, গোল্ডেন মনির ইস্যুতে নাকাল হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক অবস্থা। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে সাবেক ও বর্তমান প্রায় অর্ধ-শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে(দুদক) এ অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২শ’ বছরের ইতিহাস দুর্নীতি, অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসছে। গত বছর থেকে নানা বির্তকিত কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে চলছে। সেই রূপপুরের বালিশকাণ্ড থেকে শুরু করে হালের বির্তকিত ঠিকাদার জি কে শামীম, গোল্ডেন মনির ইস্যুতে নাকাল হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক অবস্থা। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে সাবেক ও বর্তমান প্রায় অর্ধ-শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে নানান ধরণের অনিয়ম অনুসন্ধান করে আসছে দুদক। এ কারণে কমিশনের জালে আটকা পড়েছে বড় বড় দুর্নীতিবাজ রাঘব-বোয়ালরা। অন্যদিকে প্রধান প্রকৌশলীর পদে পরিবর্তন আসার সাথে সাথে গড়ে একটি নতুন সিন্ডিকেট। অতীত আর বর্তমানে এই সিন্ডিকেটগুলোর কাজ হয়ে উঠছে বদলী বাণিজ্য, টেন্ডার, কমিশন ও নানা তদবিরের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। মাঝে মাঝে টাকার বিনিময়ে নিজের চেয়ার টিকিয়ে রাখতে কর্মকর্তারা ঠিকাদারের সাথে আতাঁত করে সরকারি অর্থ তছরূপের মাধ্যমে গড়ে তোলেন নতুন সিন্ডিকেট। মূলত সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূইয়ার হাত ধরে পূর্ত ভবনে সিন্ডিকেট প্রথা জোরদার হয়। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শুধুমাত্র নিজের পছন্দের কর্মকর্তা ও তার এলাকার লোকজনকে ঢাকায় বদলি করে নিয়ে এসে একক রাম রাজত্ব কায়েম করে। এরপর থেকে যখন যে অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী হন তখন সেই এলাকার লোকজন নিয়ে গড়ে উঠে বিশেষ সিন্ডিকেট আর বদলী আতঙ্কে থাকে অন্য এলাকার কর্মকর্তারা। এরফলে হারিয়ে যায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতীত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
সরকরের বিশেষ একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন সুত্রে জানা যায়, পূর্ত অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ অধিকাংশ কর্মকর্তা নানা অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। এর মধ্যে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের জিকে শামীম বা গোল্ডেন মনির সিন্ডিকেটের প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও তার সুপারিশ বাস্তবায়ন হওয়ার প্রচলন খুব কম। খোদ ওই প্রকৌশলীদের একটি অংশ তাদের কাজ দেওয়ার জন্য মরিয়া থাকতেন। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম ২০১৮ সালে র্যাব প্রধান কার্যালয়ের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার কাজ তৎকালীণ প্রধান প্রকৌশলীর সাথে যোগসাজশে সার্কেল-৩ থেকে না করে প্রধান কার্যালয় থেকে আহ্বান করেন। সে কাজটি পায় জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান। দরপত্র মূল্যয়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠানকে প্রাক্কলিত ব্যয় অপেক্ষা ৬.০৯ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য যা অনুমানিক প্রায় ৮০ কোটি টাকার কার্যাদেশ প্রদান করে। নিয়ম অনুযায়ী ২০ শতাংশ পারফরমেন্স সিকিউরিটি রাখার নিয়ম থাকলেও কোন পারফরমেন্স সিকিউরিটি না নিয়ে কার্যাদেশ প্রদান করেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানা যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারদের বাধা আর সমালোচনা শুরু হলে তিনি পুনরায় দরপত্র আহ্বান করতে বাধ্য হন বলে গণপূর্ত সুত্র জানায়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধেও দুদকে অনুসন্ধান চলমান।
বিএনপি-জামায়ত জোট সরকারের আমলে জাতীয় সংসদ ভবনে চাকুরিরত ছিলেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন। সেই সুবাধে অনেকেই তাকে রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের ভাবেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ভবনের কাজে দুর্নীতি তদন্তে ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়াকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি আইন বহির্ভূতভাবে সরকারি অর্থ ব্যয়ে জন্য দায়ী করে সংসদ ভবনের আরবারি কালচার ও তৎকালীণ পিডব্লিউডির সংসদে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। সেই সুপারিশ আজও হিমঘরে পড়ে আছে। তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চলমান।
এসব বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অভিযুক্তদের সাথে প্রকৌশলনিউজের পক্ষ থেকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।